করোনার টিকা সংরক্ষণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রস্তুত

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় করোনা টিকা সংরক্ষণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তিন সপ্তাহ ধরে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) নির্দেশ অনুযায়ী এই টিকা সংরক্ষণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের গোড়াতেই করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে দেশব্যাপী। চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের গতিবিধি এবং অন্তর্বর্তী সন্তোষজনক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আগামী জানুয়ারি মাসে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আজ কলকাতার সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলা হয়েছে।
আইসিএমআরের প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬৪ বছরের বেশি বয়সী দেশের সব নাগরিককে সরকারি হাসপাতালে বা বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ শিবির করে এই টিকা দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে রাজ্যগুলোর কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমান প্রবীণ নাগরিকদের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারতে ৬৪ বছরের বেশি নাগরিকদের আনুমানিক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ কোটি।
আইসিএমআরের বিজ্ঞানী, তথা এই সংস্থার এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজেস বিভাগের প্রধান সমীরণ পান্ডা গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, আগে প্রবীণ নাগরিকদের টিকা দেওয়া হলে করোনা সংক্রমণের প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। তাই ৬৪ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের প্রথম এই টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ–আলোচনার পর চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, সাধারণত বয়স্কদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এই প্রবীণ নাগরিকদের সংক্রমিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিরাপদ অবস্থানে চলে যাবে।
সমীরণ পান্ডা আরও বলেছেন, টিকা নেওয়ার লক্ষ্য মূলত তিনটি। প্রথমত, সংক্রমণ আটকানো, দ্বিতীয়ত আক্রান্ত হলেও যাতে রোগীর অবস্থা মারাত্মক না হয় এবং তৃতীয়ত আক্রান্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের মৃত্যু রোখা। তাই এই কর্মসূচিতে সিরাম, ভারত বায়োটেক, স্পুটনিকসহ ভারতে চলা টিকার ট্রায়ালের মধ্য থেকেই টিকার ডোজ নির্বাচন করা হবে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনার টিকা সংরক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে রাজ্যে ২৯টি ওয়াকিং কুলার বা স্টেশন গড়া হচ্ছে। এই রাজ্যে টিকাকরণ কর্মসূচির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও ৫ হাজার চিকিৎসককে।
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর টিকা সংরক্ষণের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় আকাশপথে এই রাজ্যে আসছে ২৯টি ওয়াকিং কুলার বা স্টেশন। শংকর ধাতবপাতে তৈরি এই ওয়াকিং স্টেশনগুলোয় রাখা হবে টিকা। এগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
অজয় চক্রবর্তী আরও বলেছেন, ‘আমরা এখন অপেক্ষা করছি টিকা আসার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের রাজ্যে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ সম্ভব—এমন তিনটি টিকাই আসবে। দিল্লি সে ইঙ্গিতও দিয়েছে।’
বলা হয়েছে, একেকটি ওয়াকিং স্টেশন প্রায় চার হাজার লিটার আয়তনের। এক লিটার আয়তনে ৪০০ ডোজ ভ্যাকসিন রাখা যাবে।
উত্তর কলকাতার বাগবাজারকে কেন্দ্র করে পার্ক স্ট্রিট, চেতলা, ওয়াটগঞ্জের মতো জায়গায় অন্তত আটটি কেন্দ্রে কঠোর নজরদারিতে এই টিকা নিরাপদে সংরক্ষণ করা হবে। বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজসহ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ওয়াকিং স্টেশন বা কুলার বসানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Comments