ক্ষুদ্র রাজতন্ত্রের আরব আমিরাত যেভাবে পরাশক্তি হয়ে উঠছে

 ক্ষুদ্র রাজতন্ত্রের আরব আমিরাত যেভাবে পরাশক্তি হয়ে উঠছে

[ছবি: সংগৃহীত]

১৯৭০-এর দশকের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। তেলশিল্পের হাত ধরে অল্প দিনের মধ্যেই সেখানকার অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও। স্বাধীনতার পর খুব কম সময়ে আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কিন্তু গত দুই দশকে রাজনৈতিক ও সামরিক উচ্চাভিলাষ পূরণের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে ক্ষুদ্র রাজতন্ত্রের দেশটি।

এ বছর মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিতর্কের তোয়াক্কা না করে আরবদের চিরশত্রু ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকে ওলটপালট করে দেওয়া করোনা ভাইরাসকেও সামলেছে বেশ শক্ত হাতে। বহির্বিশ্বে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব এবং সোমালিয়া ও লিবিয়ায় তুরস্কের প্রভাব খর্ব করতে দেশগুলোর গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক নীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক ও বিশ্লেষকদের কাছে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. নায়েল শামা সম্প্রতি একটি বার্তা সংস্থায় এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর দেশটির বিশ্ব পরিসরে তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। অথচ মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে দেশটির ‘বিশাল উচ্চাভিলাষ’ নিয়ে বিশ্ববাসীর গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার তার এক প্রতিবেদনে ২১ বছর আগের কসোভো যুদ্ধ চলার সময় তার এক অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন।

সেখানে তিনি লিখেছিলেন—দেশটির বর্তমান যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আলবেনিয়া-কসোভো যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমির স্নাতক। ঐ সময়ই তিনি কসোভো সীমান্তে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির স্থাপন করে আরব আমিরাত রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। পরবর্তী সময়েও দেশের সামরিক ভূমিকা বাড়ানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন শেখ জায়েদ। ঐ সময়ে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে শেখ জায়েদ জানান, ফ্রান্সের সঙ্গে তারা একটি সামরিক কৌশলগত সহযোগিতার চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ৪০০ ফরাসি ট্যাংক কিনবে ইউএই। এর পরিবর্তে ফরাসিরা আমিরাত সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফরাসি সৈন্যদের সঙ্গে কসোভোতে মোতায়েন করবে।

ইউএই ছিল প্রথম আরব দেশ, যারা নেটো বাহিনীর সমর্থনে ইউরোপে সেনা মোতায়েন করেছিল। এরপর আফগানিস্তানে তালেবানের পতনের পরপরই আমিরাতি সৈন্যরা নেটো বাহিনীর সঙ্গী হয়; যদিও অনেক দিন পর্যন্ত বাকি বিশ্ব বিষয়টা তেমনভাবে জানত না। আমিরাতিরা সেই সময় আফগানিস্তানে স্কুল-কলেজ করে দেয়, মসজিদ বানিয়ে দেয়, খাওয়ার পানির জন্য কুয়ো খুঁড়ে দেয়। আফগানিস্তানের সামরিক ইস্যুতে আমিরাতের তেমন বড় কোনো সামরিক ভূমিকা ছিল না। কিন্তু তারা টাকাপয়সা ও ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নেটো সৈন্যদের প্রতি স্থানীয় মানুষের ক্রোধ-সন্দেহ প্রশমিত করতে সাহায্য করেছে।

মাত্র ১ কোটি মানুষের ছোট একটি দেশের মধ্যে এই সামরিক অভিলাষ দেখে সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিস ইউএইর নাম দিয়েছিলেন ‘লিটল স্পার্টা’ বা ‘ক্ষুদ্র কিন্তু নির্ভীক’। গত ২০ বছরে, বিশেষ করে গত এক দশকে, ইউএইর রাজনৈতিক ও সামরিক অভিলাষের ডানা অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক একটি ব্যবসাকেন্দ্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছে ইউএই। আরব বসন্তের টালমাটাল অবস্থার পরপরই ইউএই মধ্যপ্রাচ্যের নানা জায়গায় প্রকাশ্যে মাথা গলাতে শুরু করে। এখন লোহিত সাগর অঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকায়ও তাদের ভূমিকা স্পষ্ট। ড. নায়েল শামা লিখেছেন, হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি দেশে ইউএই অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ক্রীড়নক হয়ে উঠেছে।

মূলত আর্থিক সুযোগ দিয়ে তারা কিছু দেশে ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠেছে, অর্থাৎ তাদের পছন্দমতো সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আবার অনেক জায়গায় ‘পিসমেকারের’ ভূমিকা নিয়েছে দেশটি। সম্প্রতি ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে দুই দশকের বিরোধ ঘোচানোর পেছনে ইউএইর বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও বাণিজ্যিক স্বার্থে লোহিত সাগর এলাকার, অর্থাৎ মিশর, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও সৌদি আরবের চারটি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ইউএই সরকারের দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা এখন আর চেপে রাখতে চাইছে না ইউএই।

এক সাক্ষাত্কারে আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাস বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হতে চাই। বিশ্বে ভূমিকা রাখতে চাই। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিতে হলেও আমরা তা নেব।’ —বিবিসি



Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা