দৃষ্টিনন্দন বইমেলা

দৃষ্টিনন্দন বইমেলা
রাতের বেলা বইমেলা দেখলে মনে হয় যেন বিশাল মাঠে আলো ঝলমলে এক স্বপ্নপুরী। আলোর রোশনাইয়ে মেলা হয়ে ওঠে রঙিন, বর্ণময়। বই বিক্রির বাইরে এসে বইমেলা এবছর সত্যিকার অর্থেই মেলা হয়ে উঠেছে।
যেখানে শুধু বই কেনাবেচার বাইরেও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য ভিন্ন কিছু আয়োজন রেখেছে মেলা কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে ভালো দিকটি হচ্ছে এবারে মেলা চত্বর জুড়েই সুন্দর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে খাবারের স্টল, যেখানে সাশ্রয়ী দামে মিলছে খাবার। ফলে স্টলে বই কেনার পাশাপাশি বসে জিরিয়ে নিতে পারছেন দর্শনার্থীরা।
বইমেলার দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়নগুলোও দর্শনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এবারের মেলায় ৩৪টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে কথাপ্রকাশ, ইউপিএল, বাংলা প্রকাশ, পাঞ্জেরী, ঐতিহ্য, জার্নিম্যান বুকস, শোভাপ্রকাশের প্যাভিলিয়নগুলো দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। প্রতিদিনই অনেককেই এসব প্যাভিলিয়নের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে দেখা যায়। এছাড়া, মেলার স্টলের মধ্যে বাতিঘর, কুঁড়েঘরসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সুন্দর ডিজাইনের স্টল নির্মাণ করেছে; যা মানুষের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
আরো পড়ুন: বইমেলায় রশিদ হারুনের দুই কাব্যগ্রন্থ
এবারের বইমেলা মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে; যা দর্শনার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে চার ভাগ করে বঙ্গবন্ধুর জীবনকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে। ‘শেকড়’, ‘সংগ্রাম’, ‘মুক্তি’, ‘অর্জন’—এই চারটি ভাগে বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনের অর্জনকে তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে। ছবি, বঙ্গবন্ধুর কথামালা ও তার অর্জনের বিভিন্ন বিষয়কে দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলা একাডেমি বইমেলায় ২৬টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি বইমেলায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রকাশনীই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন বইমেলার মূলমঞ্চে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত গ্রন্থগুলো নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
বিকাশের বিশেষ সেবা :মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ এবার মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তারা মেলায় বই কিনে বিকাশে টাকা পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ কমিশন দিচ্ছে। আর বইমেলায় দেওয়া হচ্ছে ২৫ শতাংশ কমিশন। ফলে পাঠক সব মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ কমিশন পাচ্ছে মেলায়।
শিশুপ্রহর :গতকাল শনিবারও ছিল শিশুপ্রহর। মেলা খুলে দিয়েছিল সকালেই। বাবা-মায়ের হাত ধরে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে আবার কেউবা শিক্ষকদের সঙ্গে এসেছিল বইমেলায়। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছোটোদের মজার মজার সব বইয়ের স্টল এবং বিনোদনকেন্দ্র নিয়ে সাজানো হয়েছে শিশু চত্বর।
নতুন বই :বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শনিবার বইমেলায় মোট বই প্রকাশ হয়েছে ২০১টি। এর মধ্যে নতুন উল্লেযোগ্য বইয়ের মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও ফকরুল আলম অনূদিত বঙ্গবন্ধুর শিশুতোষ জীবনী গ্রন্থ ‘ব্যালাড অব আওয়ার হিরো বঙ্গবন্ধু’, শোভা প্রকাশ এনেছে জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনীতি’, আগামী প্রকাশনী এনেছে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বেলাল চৌধুরীর ‘বত্রিশ নম্বর’, অনিন্দ্য থেকে এসেছে মোশতাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘রিরি’, পুঁথিনিলয় এনেছে ‘বুক পকেটে রবীন্দ্রনাথ (২৫ খণ্ড), চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে মারুফুল ইসলামের ‘মানুষ মানুষ আয়না’, বাংলা প্রকাশ এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা’, শিশু গ্রন্থকুটির এনেছে জাহীদ রেজা নূরের ‘স্পেনের রূপকথা’, কথাপ্রকাশ এনেছে সুমন্ত আসলামের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন আমাদের বাসায়’, অনন্যা এনেছে শামসুর রাহমানের ‘শামসুর রাহমানের গল্প’, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার সাইন্টিস মামা’।
মূলমঞ্চে আলোচনা :গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় এম আবদুল আলীম রচিত বঙ্গবন্ধু ও ভাষা-আন্দোলন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রতিভা মুত্সুদ্দি। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
ইত্তেফাক/এএএম
Comments