কম তাপমাত্রার রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহ আরও এক দিন

কম তাপমাত্রার রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায়  শৈত্যপ্রবাহ আরও এক দিন
গতকাল চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছে মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষ। গতকালও সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এখানে গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস গতকাল সন্ধ্যায় জানান, আগামীকাল পর্যন্ত এ শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে।
ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে বিভিন্ন জেলায় নানা রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। ছিন্নমূল ও কম আয়ের মানুষ একটুখানি উষ্ণতার জন্য খড় ও টায়ার জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ফুটপাথে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÑ রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর  দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, শীতের দাপটে কাতর হয়ে পড়েছে রংপুরের বদরগঞ্জের ছিন্নমূল মানুষ। বিকাল থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় রাস্তাঘাট পথপ্রান্তর। সকাল ১০টা পর্যন্ত থাকে এ পরিস্থিতি। শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কাছে ফুটপাথে বসা গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত নি¤œ মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
চুয়াডাঙ্গায় গতকালও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শীতে কষ্টে রয়েছে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছেন না। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই কষ্ট পাচ্ছেন। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে চুয়াডাঙ্গার আকাশ। রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনগুলোকে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ শহরে আসলেও তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে কম। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. রকিবুল হাসান বলেন, আরও দুই-একদিন শীতের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় কাঁপছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের মানুষ। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। তিস্তা চরাঞ্চলের লোকজন কাজে বের হতে না পেরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। গবাদিপশুও রেহাই পাচ্ছে না শীতের প্রকোপ থেকে। ঠা-ার সঙ্গে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ৪৮ ঘণ্টায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৫০ জন শিশু। জেলা সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নেত্রকোনাতেও জেঁকে বসেছে শীত। দুই দিনেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। দিনভর রোদের দেখা না মেলায় বিপাকে পড়ছেন ছিন্নমূল ও নি¤œ আয়ের মানুষ। নীলফামারীতে গতকাল সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি নীলফামারীর আকাশে। রাজশাহীতে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শীত জেঁকে বসেছে। শীতে জবুথবু অবস্থা সব বয়সী মানুষ। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ছোট-বড় সবাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র শীতে জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে রংপুরে। রংপুরে শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বাসহ ৮ জন দগ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন নারী ও দুই শিশু। গত ৪৮ ঘণ্টায় অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটে। রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তারা ভর্তি রয়েছেন। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে রংপুরের  ৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন এবং দিনাজপুরের একজন। সিরাজগঞ্জে শীত আর কুয়াশা ছন্দপতন ঘটিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। দিনভর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঠা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলমান থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু?টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় থেকে টাঙ্গাইলের রসুলপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। ঠাকুরগাঁওয়ে ঘন-কুয়াশা আর ঠাপ বেড়েই চলছে। এতে বিপাকে পড়েছে জনজীবন। কাজের সন্ধানে এসেও অনেকে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ৩২ হাজার ৬০০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে ঠা ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। এক ফালি রোদের জন্য অপেক্ষা করলেও সূর্যের দেখা মিলছে না সারা দিন। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো রাস্তাঘাটে চলাচলে ঘটছে বিঘœতা। হিমালয় থেকে নেমে আসা এই শীতের মাত্রা অত্যন্ত তীব্র। গতকাল তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতের কারণে দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
Logo of Bangladesh Pratidin

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা