আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে কাউন্সিলর প্রার্থীর ছড়াছড়ি

আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে কাউন্সিলর প্রার্থীর ছড়াছড়ি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতীকী ছবি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সমর্থন প্রত্যাশীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তবে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সেই তুলনায় কম। মেয়র পদে দুই দল থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন মাত্র ১৯ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দক্ষিণে সাত জন এবং উত্তরে ৯ জন আর বিএনপির মাত্র তিন জন সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন ফরম।
অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গড়ে প্রতি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশীর সংখ্যা সাত আর বিএনপিতে ছয় জন দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ফরম কিনেছেন ৬০০ জন। আর বিএনপির ৪৪০ জন। আজও দুই দল মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে।
গতকাল দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। উত্তর সিটিতে বিএনপির সাবেক প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং দক্ষিণে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কাউন্সিলররা দলের সমর্থন প্রত্যাশায় জোর লবিং-তদবিরের পাশাপাশি শুরু করেছেন একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার-কাদা ছোড়াছুড়ি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীই আওয়ামী লীগের বড়ো চ্যালেঞ্জ
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রত্যেক ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের ব্যানারে কমবেশি সাত জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের সমর্থন প্রত্যাশায় জোর লবিং-তদবিরে ব্যস্ত তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বাসাবাড়িতে গিয়ে এক প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দলের জন্য কাজ না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনছেন। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী মোকাবিলা করাই আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ। অনেকে দলীয় সমর্থন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১৭২টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলের সিনিয়র নেতা ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে এবং অনেকের আমলনামা বিশ্লেষণ করে এ তালিকা করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়রের পাশাপাশি দল সমর্থিত একক কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই দুই সিটিতে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন প্রত্যাশী ৮০৯ জন আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন। কাউন্সিলর নির্বাচনে দলীয় সমর্থনের আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা দেওয়া যাবে আজ শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
তালিকায় ৬০ বিতর্কিত নেতা
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ক্যাসিনো, দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে বর্তমান কাউন্সিলর, সমর্থন প্রত্যাশী দলীয় নেতাদের নিয়ে করা তালিকায় প্রায় ৬০ জন নেতার নাম ওঠে এসেছে। বিতর্কিত এসব নেতা ও কাউন্সিলররা এবার আর দলীয় সমর্থন পাবেন না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় ২৬ জন কাউন্সিলর ও দলীয় নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর পরিচালনা, মাদক ব্যবসা, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহন চাঁদাবাজি, কাউন্সিল বৈঠকে অনুপস্থিতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় উঠে আসা এসব বিতর্কিত কাউন্সিলরদের এবার দলীয় সমর্থন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির দুই জন কাউন্সিলর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়েছেন। একই কারণে গ্রেফতারের ভয়ে সিঙ্গাপুরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদসহ একাধিক কাউন্সিলর। অপরদিকে দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে ঢাকার দুই সিটির ১৮ জন কাউন্সিলর ও তাদের সম্পদ গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও আছে।
বিএনপির চিত্র
বিএনপিতে মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। গতকাল দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পুরুষ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোট মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ২০০টি এবং মহিলা (সংরক্ষিত আসনে) মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৫০টি। আর উত্তরে পুরুষ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোট মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১৫৯টি এবং মহিলা (সংরক্ষিত আসনে) মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩১টি। গতকাল নয়াপল্টনস্থ মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে (ভাসানী ভবন) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিতরণ ও গ্রহণ করা হয়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা দেওয়া যাবে।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে মিছিল সহকারে শো-ডাউন করে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ও মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ সময় এই তিন জনের সঙ্গেই হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ মিলে সাধারণ ও সংরক্ষিত মোট ১৭২টি কাউন্সিলর পদ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে কাউন্সিলর সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। আর দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। আর এই দুই সিটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।
ইত্তেফাক/নূহু

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা