বস্তির ছেলে বিশ্বসেরা ধনী

সফলতার শুরু
মানুষ বড়লোক হতে চায়, কিন্তু এর জন্য সময় দিতে চায় না। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার নেশা অনেকের মনেই আছে। কার্নেগি কিন্তু একলাফে বড়লোক হতে চাননি। ছোট থেকে শুরু করেছেন। দিন বদলেছে খুব ধীরে ধীরে। তিনি খুব ভালো করেই মানতেন, বাস্তব জীবনে ইচ্ছাশক্তি ও চেষ্টা দ্বারা অনেক কিছুই করা সম্ভব। জীবন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতেন তিনি। জনৈক ব্যক্তি একদিন কার্নেগিকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করেন। এন্ড্রু কার্নেগি জবাব দিলেন, মানুষ নিয়ে কারবার করা যেন সোনার জন্য মাটি খোঁড়ার মতো। এক আউন্স সোনার জন্য টনের পর টন মাটি কাটতে ও সরাতে হয়। কিন্তু সোনাই খোঁজা হয়, মাটি নয়। তাঁতির মজুর হিসেবে সাড়ে বারো টাকা বেতনে রোজগার শুরু করা কার্নেগি পিয়নের চাকরি দিয়ে ভাগ্যবদল করতে চেয়েছিলেন। সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর তার অভিজ্ঞতা তাকে আরেকটু সামনে টেনে নিয়ে গেল। টেলিগ্রাফ পাঠানোর কাজ খুব ভালো করেই রপ্ত করলেন তিনি। টেলিগ্রাফ যন্ত্র পরিচালনায় তার দক্ষতা সবার নজর কেড়েছিল। টেলি বিভাগে দ্রুত তার উন্নতি হতে থাকল। যে বড় কর্তার অধীনে তিনি কাজ করতেন একদিন তার পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন নিজ যোগ্যতা বলে। টেলি বিভাগের বড় সাহেব হওয়ার পর চাকরির পাশাপাশি তিনি রেলগাড়ি ও খনির তেলের ব্যবসা শুরু করেন। রেলগাড়ি তখন যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। রেলগাড়ির ব্যবসায় প্রচুর টাকা আসতে থাকল তার হাতে। এ টাকা তিনি অপচয় করলেন না। তেলের ব্যবসায় লাভের টাকা খাটিয়ে আয় আরও বাড়িয়ে নিলেন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই এই ব্যবসা থেকে অনেক টাকা লাভ হতে থাকে। লাভের টাকা আরও নতুন নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকেন কার্নেগি। সব ব্যবসাতেই তিনি একের পর এক সফল হতে থাকেন। এভাবে একে একে সাতটি বড় বড় লোহার কারখানা কিনে ফেলেন কার্নেগি এবং নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সেগুলো চালাতে থাকেন। কার্নেগির বয়স তখনো ৩৫ এর কোটায় পৌঁছেনি, এই সময়েই কার্নেগি বিশ্বের নামকরা লোহা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি তার সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্টিল কোম্পানির মালিক ছিলেন। একসময় ৩৪ জন ক্রোড়পতি তার সংস্থায় কাজ করতেন। সব মিলিয়ে তিনি তখন টাকার পাহাড়ে চড়েছেন।
সাড়ে বারো টাকা বেতনে তাঁতির মজুর

বস্তির ছেলের ভাগ্য আর কী রকম হবে। যেখানে যায় সেখান থেকেই তাকে তাড়িয়ে দেয়। কেউ কোনো কাজ দিতে চায় না। কিন্তু কার্নেগি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন বড় কোনো কাজ না মিললেও ছোট কোনো কিছু দিয়েই দিন শুরু করতে হবে। ভালো চাকরি লাভের আশায় কার্নেগি অফিসের ভিতরে যান। কিন্তু পোশাক-আশাক ভালো না হওয়ায় সেই অফিসের কেরানি তাকে বের করে দেন। দরজার বাইরে কার্নেগি দাঁড়িয়ে থাকতেন। তার মনে আশা হয়তো তাকে ডাকবেন বড় কর্তা। বড় কর্তা এসবের কিছুই জানতেন না। কার্নেগি তার পরের দিন আবার সেই অফিসে যান চাকরির আশায়। এবারও সেই কেরানির কারণে অফিসের বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি কার্নেগি। কিন্তু চাকরিটি তার চাই-ই চাই। এই আশায় তিনি তৃতীয় দিন আবার যান সেই অফিসে। এবার আর কেরানি তাকে তাড়িয়ে না দিয়ে বড় সাহেবের কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন। বড় সাহেব সব শুনে বললেন, পাঠিয়ে দাও তো দেখি ছোকরা কী চায়। সেদিনই কার্নেগি টেলিগ্রাফ অফিসের কাজে ভর্তি হলেন। সেদিনের সেই পিয়ন ছেলেটি একদিন টেলি-বিভাগের বড় সাহেবও হয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে? পিয়নের কাজ করতে করতেই নিজ মেধা দিয়ে টেলিগ্রাফের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন কার্নেগি। তারপর পিয়নের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন স্থানীয় রেলস্টেশনের টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে। এভাবে ধীরে ধীরে টেলি-বিভাগের বড় সাহেবের পদটিও অর্জন করেন কার্নেগি।
সেই বস্তির ছেলে কিনে নিলেন গোটা পার্ক

টাকার পাহাড়


Comments