কাপ্তাই লেকে গবেষণায় নামল তরি
- Get link
- X
- Other Apps

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উদ্যোগে তৈরি ও পরিচালিত এ জাহাজের নাম দেওয়া হয়েছে-‘সিভাসু রিসার্চ ভেসেল’। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গবেষণা তরিটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণা প্রয়োজন। ভাসমান এ তরি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
১৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার প্রস্থের দ্বিতল এ গবেষণা তরিটি প্রস্তুত করেছে সুইডেনের একটি জাহাজ তৈরি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাঙামাটির পুরোনো হেলিপ্যাড এলাকায় এ জাহাজ তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই নৌযানটিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ ৩টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে এটি কাপ্তাই লেকে নামানো হয়। এখন থেকে সারা বছর জাহাজটি পুরো কাপ্তাই লেকে চষে বেড়াবে।
হারানো মাছ ফেরানোই লক্ষ্যে
কাপ্তাই লেক নিয়ে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট একাধিকবার গবেষণা করেছে। তাদের সবশেষ গবেষণায় উঠে এসেছে, কাপ্তাই লেকের মহাশোল, পিপলা শোল, বাঘাআইড়, নান্দিনা প্রভৃতি মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর বিলুপ্তির আশঙ্কায় আছে—সরপুঁটি, পাবদা, গুলসা, বাচুয়া ও বাটাসহ ১৮ প্রজাতির মাছ। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই হ্রদে পাওয়া মাছের মধ্যে ৮১ শতাংশই ছিল কার্পজাতীয়। অথচ বর্তমানে ৯০ শতাংশই হলো চাপিলা ও কাচকি।
গবেষণার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া মাছ পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে জানিয়েছে সিভাসু কর্তৃপক্ষ। এই তরির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্তত ১৫টি কাজ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো লেকের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের হার বের করা, মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টির জন্য স্থান নির্বাচন, সময়ের সঙ্গে লেকের বিভিন্ন ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা, বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা। এ ছাড়া লেকের মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের বিস্তৃতির বর্তমান অবস্থা নিরূপণ ও প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে করণীয় বিষয় নির্ধারণ, লেক ভরাট হওয়ার জন্য দায়ী কারণগুলো বিশ্লেষণ ও নিরূপণে উদ্যোগ নেওয়া, লেকের দূষণ দূরীকরণে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করা হবে এ গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে।
সিভাসুর উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু বিশ্ববিদ্যালয় সফরে যান তিনি। সে সময় সেদেশের সরকারের সহযোগিতায় কৃত্রিম হ্রদ ‘লেক কেনিয়র’-এ ওই বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রাম্যমাণ জাহাজের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের কাছে সফলতার গল্প শুনেই কাপ্তাই লেকেও একই ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেন।
গবেষণা তরি উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ দীপংকর তালুকদার, সেনা রিজিয়নের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইনুর রহমান, সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার, সিভাসু উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির, সিভাসুর মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এম নূরুল আবছার খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ।
একই সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সাংসদ বাসন্তি চাকমা ও চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

- Get link
- X
- Other Apps
Comments