৫২৫ বছর পর বন্ধ পশুবলি

ত্রিপুরা রাজবাড়ি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিত্রিপুরা রাজবাড়ি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ৫২৫ বছর ধরে চলে আসা পশুবলির রীতি এবার বন্ধ হয়ে গেল। ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় মেনে গতকাল সোমবার মহানবমীর দিন ত্রিপুরার রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গামন্দিরে পশুবলি দেওয়া হয়নি।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের ত্রিপুরার হাইকোর্ট রাজ্যের বিভিন্ন মন্দিরে পশুবলির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি অরিন্দম লোধের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানান, রাজ্যের কোনো মন্দিরে আর পশু বা পাখি বলি দেওয়া যাবে না।

বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গামন্দিরে ৫২৫ বছর ধরে চলে আসছে পশুবলি। তবে গতকাল দুর্গামন্দিরে নোটিশ লাগিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ত্রিপুরা হাইকোর্টের নির্দেশ বলে এবার পশুবলি বন্ধ রয়েছে। মন্দিরের দেবার্চন বিভাগের আধিকারিক নান্টুরঞ্জন দাস বলেছেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পশুবলি বন্ধ করেছি। তবে রাজ্যের আইনমন্ত্রী রতন লাল দাস এই পশুবলি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে যাচ্ছেন।’
কয়েক বছর আগে ত্রিপুরার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ সুভাষ ভট্টাচার্য। তিনি নবমী পুজোর দিন দুর্গামন্দিরে মহিষ বলি দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি তিন বছর ধরে হিন্দুশাস্ত্রের নানা দিক খতিয়ে দেখেন। তারপরই তিনি পশুবলি বন্ধের দাবিতে ত্রিপুরা হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি মামলা করেন। এরপর তিন দিন ধরে একটানা এই মামলার শুনানি চলার পর আদালত ২৭ সেপ্টেম্বর ওই রায় দেন।
তবে সরকারের তরফে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণ কান্তি ভৌমিক পশুবলি বন্ধের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, শত শত বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। তা ছাড়া ১৯৪৯ সালে ভারত ভাগের পর ত্রিপুরার রাজারা যখন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে শামিল হন, তখন থেকে ত্রিপুরার সব মন্দিরের পূজা এবং বলির খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করার চুক্তি হয়। একই সঙ্গে চলে আসছে অতীতের এই প্রথা।

পাশাপাশি আবেদনকারী যুক্তি পেশ করে বলেন, বেদ-উপনিষদ কোথাও লেখা নেই যে, পশুবলি বন্ধ হলে হিন্দু ধর্ম পালনে বাধা তৈরি হবে। তা ছাড়া রাজন্য আমলের মন্দিরগুলোতে সরকারি খরচে বলি দিতে হবে—এই দাবির সপক্ষে কোনো দলিলপত্র পেশ করতে পারেনি সরকার পক্ষ।
ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের যুক্তি খারিজ করে জানিয়ে দেয়, পশুবলির অধিকার সংবিধানের ২৫ ধারা অনুযায়ী ধর্মের অধিকারের আওতায় আসে না। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, রাজ্যের সব মন্দিরে সরকার বা কোনো ব্যক্তি, কেউই পশু বা পাখি বলি দিতে পারবেন না। এর জেরেই এবার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজায় ত্রিপুরা রাজ্যে বন্ধ হয়ে গেল পশু ও পাখি বলি।
প্রথম আলো

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা