১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি মস্ত জাহাজ


 

পুরো জাহাজ ঘুরে দেখতে হলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। জাহাজটি লম্বায় ৩৪০ মিটার। আয়তনে তা ১৯ হাজার বর্গমিটার। ২৩ বছর জ্বালানি তেল পরিবহনের পর জাহাজটির শেষ গন্তব্য এখন সীতাকুণ্ডের উপকূল। এমন লম্বা জাহাজ গত এক দশকে ভেড়েনি এই উপকূলে। জ্বালানি তেল পরিবহনের এ জাহাজটির নাম ‘এমটি অ্যাটবান’।
২৩ বছরের পুরোনো হলেও জাহাজটির কদর একটুও কমেনি। ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে জাহাজটি। এ জাহাজটি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে জাহাজটির দাম পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এ ধরনের নতুন জাহাজ কিনতে গুনতে হবে ১ হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের উঁচু ভবন আজিজ কোর্টের (৩২ তলা) তিন গুণ সমান লম্বা জাহাজটি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন সিটি সেন্টারের দ্বিগুণ। আয়তন হিসাব করলে জাহাজটিতে তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। জাহাজটি লম্বায় ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে বড়। জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তৈরি হয় জাহাজটি।
কাস্টমস–এর আনুষ্ঠাকিতা শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা থেকে চালিয়ে শেষ ঠিকানায় নিয়েছেন ক্যাপ্টেন মোবারক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, জাহাজটি ভাঙার সুবিধার জন্য জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ গতিতে উপকূলে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাহাজটি ছিল সৌদি আরবের জ্বালানি তেল পরিবহন কোম্পানি ‘বাহরি’র হাতে। ‘ভেরি লার্জ ক্রুড ক্যারিয়ার’ বা অতিকায় বড় জ্বালানি তেল পরিবহনকারী বাহন হিসেবে সাগর–মহাসাগরে চলত এটি। ৩ লাখ টন জ্বালানি তেল ভরার পর পানির নিচের অংশে থাকত জাহাজটির সাড়ে ২২ মিটার। গত জুনে দুবাইভিত্তিক পুরোনো জাহাজের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফাইভ স্টার শিপিং–এর কাছে বিক্রি করে তারা। সেখান থেকে কিনে নেয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার শীতলপুরে অবস্থিত জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড।
সীতাকুণ্ড জাহাজভাঙা কারখানা
জাহাজটির দাম পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা
জাহাজটি কিনেছে গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড। শিপইয়ার্ডটিতে নিয়োজিত ৪০০ শ্রমিক জাহাজটি কেটে টুকরো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একযোগে ৪০০ জন শ্রমিক কাজ করলেও এটি কাটতে লাগবে এক বছর। অবশ্য শিপইয়ার্ডটির লক্ষ্য, দশ মাসের মধ্যেই কাটাকুটি শেষ করা।
জাহাজটি থেকে পাওয়া যাবে ৪৮ হাজার ১০০ টন লোহা ও লোহার প্লেট। সবচেয়ে দামি হলো পিতলের তৈরি প্রপেলর। এ জাহাজে থাকা প্রপেলর বা পাখার ওজন ৭০ টন। এটি বিক্রি করে পাওয়া যাবে অন্তত ৩ কোটি টাকা। এর বাইরে অন্তত শতাধিক ধরনের পণ্য আছে জাহাজটিতে। আসবাব থেকে শুরু করে তৈজসপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মরিচারোধী ইস্পাতের পাইপ, প্লাস্টিকের পাইপ, জেনারেটর, তার, টেলিভিশন, ফ্রিজ কত কিছুই না আছে এটিতে। এই জাহাজ থেকে লোহার প্লেট পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার হবে দেশীয় জাহাজ নির্মাণ কারখানায়।
গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেডের পরিচালক সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৩৭ বছর ধরে তাদের জাহাজভাঙা কারখানায় সাড়ে ৩০০ জাহাজ ভাঙা হয়েছে। লম্বায় এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। জাহাজটি থেকে যেসব পুরোনো লোহা পাওয়া যাবে তা তাঁদের গোল্ডেন ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা জাহাজ হলো ‘নক নেভিস’। ২০১০ সালে ভারতের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ভাঙা হয় এটি। ৪৫৮ মিটার লম্বা জাহাজটি ভাঙতে সময় লেগেছিল এক বছর।
প্রথম আলো

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা