জাপানে নতুন সম্রাট হচ্ছেন যুবরাজ নারুহিতো
- Get link
- X
- Other Apps

তবে নতুন সম্রাটের কাছ থেকে নাটকীয় কোনো নতুন পরিবর্তন জাপানে প্রত্যাশা করা হচ্ছে না। বরং অনেকে মনে করছেন, পিতা আকিহিতো শান্তির যে ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকেও দেশের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার তাগিদ সম্পর্কে পরোক্ষে সচেতন করে দিয়েছেন, পুত্র নারুহিতো সেই পথেই চলবেন। তারপরও নতুন সম্রাটকে ঘিরে কিছুটা নতুনত্ব জাপানের জনগণ প্রত্যাশা করছেন এবং তাঁদের সেই প্রত্যাশার পেছনে আছে সম্রাট নারুহিতোর তুলনামূলক ব্যতিক্রমী জীবনধারা।
জাপানের সংবাদমাধ্যমের বড় এক অংশ মনে করছে, সম্রাটের পরিবারে ব্যতিক্রমী সদস্য হিসেবে উদার পারিবারিক পরিবেশ বেড়ে উঠেছেন নারুহিতো। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক ভাবনাচিন্তায় নানা দিক থেকে প্রভাবিত হয়েছেন তিনি। ফলে, শান্তি ও মৈত্রীর বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা হয়তো সম্রাট নারুহিতো রাখবেন। জাপানে রাজপুত্রদের সাধারণত শৈশব থেকেই বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে কিছুটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পরিচর্যা করার রীতি প্রচলিত ছিল। বর্তমান সম্রাট সম্ভবত হচ্ছেন সেই ধারার প্রথম ব্যতিক্রম। পিতা আকিহিতো একজন সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। সম্রাজ্ঞী মিচিকো সন্তানদের কাছে রেখে মানুষ করেছেন। ফলে, শৈশব থেকে মানব সম্পর্ক বিষয়ে ভিন্ন এক শিক্ষা সম্রাট নারুহিতো পেয়েছেন।
নারুহিতো হচ্ছেন জাপানের ইতিহাসে প্রথম সম্রাট, বিদেশে যিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ২৩ বছর বয়সে একা বিদেশে গিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মের্টন কলেজে দুবছর ধরে তিনি অধ্যয়ন করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে জাপানের নতুন সম্রাট নৌপরিবহন নিয়ে গবেষণায় জড়িত ছিলেন। এটা এখনো তাঁর প্রিয় একটি বিষয়। ফলে, অনেকেই ধারণা করছেন জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা নিয়ে তিনি হয়তো আগ্রহী হবেন।
অক্সফোর্ডের ছাত্রজীবনে খুবই সাধারণ চালচলন এবং অমায়িক ব্যবহারের জন্য সহপাঠীদের কাছে পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজপরিবারের বাইরে সাধারণ এক নাগরিককে বিয়ে করেন।
নানা রকম জটিলতার মুখেও স্ত্রীর পাশে সার্বক্ষণিক অবস্থান তাঁর সেই মনের উদারতাকেই তুলে ধরে। অন্যদিকে, সম্রাজ্ঞী সাধারণ পরিবার থেকে এলেও সেই অর্থে সাধারণ তিনি নন।
দেশের একজন শীর্ষ কূটনীতিকের কন্যা, নিজেও পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন একজন কূটনীতিক হিসেবে। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেদিক থেকে সম্রাট দম্পতির একে অন্যের প্রতি বোধগম্যের বিস্তৃতি অনেক গভীর।
দেশের একজন শীর্ষ কূটনীতিকের কন্যা, নিজেও পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন একজন কূটনীতিক হিসেবে। সেই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেদিক থেকে সম্রাট দম্পতির একে অন্যের প্রতি বোধগম্যের বিস্তৃতি অনেক গভীর।
অনুকূল এ রকম বহুবিধ পটভূমি সম্রাটের দায়িত্ব পালনে নারুহিতোকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে তুলেছে এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে পিতার মতোই জনগণের সম্রাট হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব তিনি পালন করবেন বলে জাপানে অনেকের বিশ্বাস।
তবে সম্রাট পরিবারকে ঘিরে সবটাই যে ইতিবাচক, তা অবশ্য নয়। সীমিত মাত্রার সংখ্যালঘু হলেও জাপানে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি কামনা করা একটি জনগোষ্ঠী রয়ে গেছে। তারা মনে করে, রাজতন্ত্র বহাল রাখা হচ্ছে সর্বজনীন মানবাধিকারের ধারণার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ যেহেতু সব মানুষের সম-অধিকারের বার্তা প্রচার করছে, সেদিক থেকে চিহ্নিত একটি পরিবারের জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে সেই বার্তার পরিপন্থী। তবে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক জাপানে এখনো নেই। তাই বলে ভবিষ্যতেও যে এই ধারণা সুপ্ত ধারণা হিসেবেই বহাল থাকবে, সেই নিশ্চয়তা অবশ্য কারও পক্ষেই দেওয়া সম্ভব নয়।
তারপরও বলতে হয়, নতুন অনেক প্রত্যাশাকে সামনে রেখে সিংহাসনে আসীন হলেন সম্রাট নারুহিতো। তাঁর যুগের নামকরণ করা হয়েছে রেইওয়া, যার অর্থ হচ্ছে চমৎকার ঐকতান বা সাদৃশ্য। সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের দিন ১ মে থেকে জাপানে শুরু হচ্ছে নতুন বর্ষ গণনা, অর্থাৎ সালটি এখন ফিরে গেছে রেইওয়া ১ সালে।
রেইওয়া যুগে সম্রাট নারুহিতোর প্রতীকী নেতৃত্বে শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে মানবসমাজে চমৎকার এক ঐকতান গড়ে তোলায় অগ্রণী ভূমিকা জাপান পালন করবে, সেই প্রত্যাশা এখন করছেন জাপানের পাশাপাশি অন্য অনেক দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ।
রেইওয়া যুগে সম্রাট নারুহিতোর প্রতীকী নেতৃত্বে শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে মানবসমাজে চমৎকার এক ঐকতান গড়ে তোলায় অগ্রণী ভূমিকা জাপান পালন করবে, সেই প্রত্যাশা এখন করছেন জাপানের পাশাপাশি অন্য অনেক দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ।

- Get link
- X
- Other Apps
Comments