প্রিন্ট করুন printer বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি

বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি


দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সফরে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়ে ওই দুটি দেশের মানুষের মন জয় করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সুলতান। এবার বাংলাদেশেও বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন তিনি। তবে ঢাকায় এ সফরে নিজে না এসে যুবরাজ তার মনোনীত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন, যারা বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ দলটির নেতৃত্ব দেবেন দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মাদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি। এক দিনের সফরে এ দলটির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকায় আসছে সৌদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের এ দলটি। ৬ মার্চ রাতে অথবা ৭ মার্চ সকালে তাদের ঢাকা পৌঁছানোর কথা। এ সফরে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলারের (২ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রতিনিধি দলে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চারটি দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ ও কোম্পানিগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা থাকবেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সূত্রগুলো বলছে,  প্রায় ৩৪ সদস্যের এ দলে সৌদি যুবরাজের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ছাড়াও সৌদিভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি আল রাজি গ্রুপ, তেল কোম্পানি আরামকো, বিদ্যুৎ কোম্পানি আল ফানার গ্রুপ, সৌদি-কোরিয়ান কোম্পানি হ্যানওয়া, টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি এসটিসি, সৌদিভিত্তিক কোরিয়ান কোম্পানি ডায়েলিম, পর্যটনভিত্তিক কোম্পানি আল হকায়ের গ্রুপ ও খাদ্যজাত কোম্পানি জিসিসি গ্রুপের কর্মকর্তারা থাকতে পারেন। যেসব খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি : বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে চায় সৌদি কোম্পানি আল ফানার গ্রুপ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করেছে সৌদির ওই কোম্পানিটি। এ খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাবটি এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী সৌদি আরব। বাংলাদেশে একটি পেপার মিল ও সিমেন্ট কারখানা স্থাপনেও আগ্রহ দেখাচ্ছে সৌদি আরব। এরই মধ্যে একটি সৌদি কোম্পানি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিষয়ে বিসিআইসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এবারের সফরে পেপার মিল ও সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের প্রস্তাবটিও আলোচনায় উপরের দিকে রয়েছে। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতেও বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। সৌদি কোম্পানি ডাইমেনসনস অব সৌদি আরব ও বাংলাদেশের জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি জেমকো এ বিষয়ে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিও করেছে গত ডিসেম্বরে। বিনিয়োগ প্রস্তাবে এটিও গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া সৌদি কেবলস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ইলেক্ট্রিক কেবলস নির্মাণেও বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশে সার কারখানাতেও বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে সৌদির। জানা গেছে, সৌদি-কোরিয়ান কোম্পানি হ্যানওয়া বাংলাদেশে ডিএপি এবং ইউরিয়া সার কারখানায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সৌদি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (এসটিসি) বিটিসিএলের সঙ্গে জয়েন্টভেঞ্চারে কাজ করতে আগ্রহী। কোম্পানিটি বাংলাদেশে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিকম খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। সৌদিভিত্তিক কোরিয়ান কোম্পানি ডায়েলিম বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নেপালে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও সৌদি আরবের কোম্পানি জয়েন্টভেঞ্চারে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। সৌদির বিখ্যাত কোম্পানি আল রাজি গ্রুপ বিসিআইসির সঙ্গে যৌথভাবে ইউরিয়া ফরমালডিহাউড নামক রাসায়নিক সার (ইউএফ-৮৫) কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ ছাড়া এই কোম্পানি বাংলাদেশে সোডা অ্যাস ও কস্টিক সোডা কারখানাও স্থাপন করতে চায়। এটিও একটি বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখছে সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে সুদান ও উগান্ডায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি সরকারি কোম্পানি সালিক। এবার সফরে এ ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া সৌদির তেল পরিশোধন কোম্পানি আরামকো জয়েন্টভেঞ্চারে বাংলাদেশে একটি তেল পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করতে আগ্রহী। এই রিফাইনারি থেকে বাই প্রোডাক্টস হিসেবে যে ফার্নেস অয়েল বেরুবে সেটি আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা করতে চায় সৌদি আরব। সৌদি বিখ্যাত পর্যটন কোম্পানি আল হকায়ের গ্রুপ বাংলাদেশের পর্যটন ও সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। হোটেল হিলটন, শেরাটন এবং হলিডে ইন-এর স্বত্বাধিকারী এই কোম্পানিটি কক্সবাজারে এ ধরনের আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ও থিম পার্ক নির্মাণে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তারা পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে সৌদির। সূত্রগুলো জানায়, সৌদি মালিকানাধীন বেশ কিছু গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে চীন ও মিসরে। এখন সৌদি আরব সেই কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে চায়। বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে সম্মত হলে তৈরি পোশাক শিল্পে এটি হবে সৌদি আরবের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিনিয়োগ।  খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যেও বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। দেশটির জিসিসি নামক একটি কোম্পানি বেকারি এবং খাদ্যপণ্য জাতীয় ফুড ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রয়োজনে তারা স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করবে। সৌদি সরকার মালিকানাধীন কোম্পানি আল সালাম অ্যারোস্পেস বাংলাদেশের এয়ার ক্রাফট রিপেয়ার এবং ব্যবস্থাপনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকার চাইলে এ খাতেও তারা বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতেও বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। দেশটির বৃহত্তম আইটি কোম্পানি ক্যাম্বার ডিনউয়িং বাংলাদেশে তাদের অফিস নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব খাতে বিনিয়োগ ছাড়াও সৌদি আরবে বাংলাদেশের ব্যাংক স্থাপন, মধ্যপ্রাচ্যে কাজে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়াতে ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সৌদির এই বিনিয়োগ প্রস্তাব সম্পর্কে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, সৌদি প্রতিনিধি দলের এই সফরে অন্তত ১৬টি প্রকল্পে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করছেন তারা। একই অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় কলেবরের প্রতিনিধিদের সফর হচ্ছে এটা, যেখান থেকে একটি বিশাল আকারের বিনিয়োগ প্রস্তাব আশা করছি আমরা।




Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা