বাংলা ভাষার প্রেমেই মেলায় রুশ শিক্ষিকা

Book Fair
থোক থোক হলুদ-সাদা ফুলের একটা সমুদ্র ঘিরে ফেলেছে যেন!
তার মাঝখানে ঈষৎ থতমত সদ্য যুবক। ‘এ কী! একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরতে পারিসনি?’ কপট রাগে ঝাঁঝিয়ে উঠছে বাসন্তীরঙা শাড়ি। ফি-বছরই বইমেলায় এমন মুহূর্ত রচনা করে সরস্বতী পুজো। কিন্তু সরস্বতী পুজো এবং মেলার শেষ রবিবারের এমন মোহনা কি আগে কেউ দেখেছে? 


৪৩ বছরের ইতিহাস কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার! তাই আগে এমন ঘটেনি, বলা যাচ্ছে না। কিন্তু কবে, তা-ও মনে করতে পারলেন না গিল্ডকর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। হলুদ সর্ষেখেত বা সাদা-হলুদ ফুলের এক-একটা চলমান বাগান হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কপোত-কপোতীরা। লিটল ম্যাগাজ়িন তল্লাট থেকে গুয়াতেমালার প্যাভিলিয়ন। গুয়াতেমালার হাসিখুশি তরুণী গল্পকার আরাকেলি এনরিকেজ অর্তিস স্প্যানিশ ছাড়া অন্য ভাষা এক বর্ণ না-বুঝলেও হলুদ শাড়ি পরা মেয়েদের একটা দলকে দেখে বিগলিত। হাত নেড়ে নানা ভঙ্গিতে বইমেলার এই দৃশ্যটাই কলকাতার মধুরতম ছবি হিসেবে দু’‌চোখে মেখে নেওয়ার কথা বোঝালেন। 
বইমেলা মানেই অজস্র চেনা-অচেনা চরিত্রের ভিড়। মুম্বই আইআইটি-র অধ্যাপক অভিজিৎ মজুমদারের বই ‘নৈঃশব্দ্যের পত্রগুচ্ছ’ ছবিতে-শব্দে যৌন সংখ্যালঘুদের গল্প বলছে। বস্টনবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী অলকেশ দত্তরায় সাধারণত এ সময়টা কলকাতাছাড়া হন না। তাঁর এ বছরের বইয়ের নাম এবিসিডি। বেশ রহস্য করে নামমহিমা ব্যাখ্যা করছেন, ‘‘এ হল অ্যাক্রোনিম। আমেরিকাবাসী বং কানেকশন ও ডায়াস্পোরা। রম্যরচনার সঙ্কলন।’’ রুশ দেশের মেয়ে একাতেরিনা কোস্তিনাকে দেখেও বিস্ফারিত বাঙালি। দস্তয়েভস্কির শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও হিন্দি পড়ান তিনি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ভক্ত, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েকটি গল্পের রুশ অনুবাদক একাতেরিনা। তিনি মুখ খুললেই গোটা গোটা মিষ্টি বাংলা শুনতে ভিড় জমে যাচ্ছে। একাতেরিনার ছাত্রদের মধ্যে হিন্দি শিক্ষার্থীই বেশি, বাংলা ক্লাসে পড়ুয়া হাতে গোনা! রুশ তরুণী তবু বলে ওঠেন, ‘‘হিন্দি স্বামী হলে বাংলা কিন্তু প্রেমিক। প্রেমের ভাষা, মনের ভাষা।’’ সব কিছু ঠিক থাকলে পরের বছর বইমেলার থিম-দেশ রাশিয়াই।
ঢাকা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, চট্টগ্রামের প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক আবুল মোমেন, সঙ্গীত-গবেষক, সংস্কৃতিকর্মী শীলা মোমেনদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় নিত্যনতুন শব্দের আমদানি নিয়ে আড্ডা জমেছ উঠেছিল। রবি-বিকেলে মোমেন সাহেব বইমেলার ‘বাংলাদেশ দিবস’-এ ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলা সাহিত্য’ বিষয়ে বক্তৃতা দিতে উঠলেন। সহ-আলোচক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। লোকপাল, তথ্য কমিশনে নিয়োগে টালবাহানা দিয়ে তথ্য জানার অধিকার বিষয়ে সজাগ 


সমাজকর্মীদের আলোচনাতেও লোকের অভাব নেই। 
ফেসবুকে ডাক দিয়ে, ‘অ্যাপো’ জমে উঠছে অমুক নম্বর স্টলের ধারে। কিন্তু এ বার বইমেলায় নেট-সংযোগ ভয়ানক ঢিলেঢালা। সৌরভ মুখোপাধ্যায়, মারুফ হুসেন, সুমেরু মুখোপাধ্যায়দের মতো প্রকাশকেরা বলছিলেন, নগদই ভরসা। কার্ডে কেনাকাটা কার্যত বন্ধ। বড় প্রকাশকদের দোকানে অনেক কার্ড সোয়াইপ যন্ত্র থাকায় তত সমস্যা নেই। কিন্তু ছোট দোকানগুলো যন্ত্র-বিভ্রাটে নাজেহাল। বড় প্রকাশকদের মতে, সল্টলেকের বইমেলায় বাণিজ্য ভালই হচ্ছে। অনেকে কেনার পরিকল্পনা করেই মেলায় ঢুকছেন। কিন্তু করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড বা পার্কিং লটের ও-পারে বইমেলার এক ও দু’নম্বর গেটের দিকটায় ভিড় কম। আজ, সোমবার মেলার শেষ দিন। বইমেলার ইতিহাসে এই প্রথম। ভিড় ও কেনকাটার রেকর্ড বজায় থাকবে তো? শেষবেলায় মার্কশিট খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত বিক্রেতারা।
Anandabazar Patrika - Bengali Newspaper

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা