সরিষার মাঠে ক্ষিতিশ বিশ্বাসের মধু সংগ্রহ

নওপাড়ায় সবচেয়ে বড় সরিষার মাঠে এবার নাটোরের বড় হরিশপুর থেকে এসেছেন মৌচাষী ক্ষিতিশ বিশ্বাস। ছবি: ইত্তেফাক
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মৌসুমের শেষ মুহূর্তে সরিষা ফসলের মাঠে মৌচাষীরা বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন ও সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাস ব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌমাছির বাক্সসহ তারা এসব মাঠে অবস্থান করছেন। সরিষা ফুল শেষ হয়ে এলেও এ সব মাঠ এখনও যেন মৌমাছির মৌ মৌ গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে আছে। একদিকে মৌ-চাষিরা মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিষার ফলনও বাড়ছে।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমমাণ মৌচাষীরা রবি মৌসুমের শুরুতে সরিষার মাঠে মাঠে মৌমাছির বাক্স নিয়ে হাজির হন। স্থানীয় মৌচাষীদের পাশাপাশি ভ্রমমাণ মৌচাষীরাও বড় আকারের সরিষা মাঠ বেছে নিয়ে অবস্থান নেন। চলতি বছর এ উপজেলায় প্রায় ২৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে।
নওপাড়ায় সবচেয়ে বড় সরিষার মাঠে এবার নাটোরের বড় হরিশপুর থেকে এসেছেন মৌচাষী ক্ষিতিশ বিশ্বাস। তার স্থায়ী নিবাস ঠাকুরগাঁও জেলায়। বুধবার দুপুরে বাগাতিপাড়ার নওপাড়া সরিষার মাঠে গিয়ে কথা হয় তার সাথে।
তিনি জানালেন, ২০০৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ শুরু করেন। প্রথমে স্বল্প পরিসরে ১৮টি বাক্স নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার ৫০টি বাক্স রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান মেলিফেরা জাতের মৌমাছি চাষ করেন। তিনি সপ্তাহে আড়াই থেকে চার মণ পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করেন। মণ প্রতি পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা দরে তিনি মধু বিক্রি করেন। তবে চার থেকে পাঁচ মাস মধু সংগ্রহ করা যায়। বছরের বাঁকি সময়টা বাড়িতে রেখে মৌমাছিদের লালন-পালন করতে হয়। মৌচাষে তার বছরে দুই থেকে ছয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
তিনি বছরের বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জেলা শরিয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, ঠাকুর গাঁও, পঞ্চগড়ে মৌমাছির বাক্স নিয়ে লিচুর বাগান কিংবা সরিষার মাঠে ঘুরে বেড়ান। মধু সংগ্রহের পর খাঁটি মধু তিনি স্থানীয় বাজারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধির কাছে বিক্রি করেন। মৌচাষ করে বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী জানান, চলতি মৌসুম থেকে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক ইউনিয়নে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সরিষা প্রদর্শনীর পাশাপাশি মৌচাষের বিভিন্ন উপকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ফলে চাষীরা মধু সংগ্রহ করে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন সচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিষা ফুল থেকে মৌমাছির মধু সংগ্রহকালে পরাগায়নের হার বাড়ছে। ফলে সরিষার ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
ইত্তেফাক/বিএএফ
Comments