ধর্মীয় সহিংসতা থামাতে কেমন ভূমিকা রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ধর্মীয় সহিংসতা থামাতে কেমন ভূমিকা রাখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
নানা ধর্ম ও বর্ণের হাজার হাজার মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করে ধর্মীয় সহিংসতার পেছনে কারণ বোঝার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এক ধরনের সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারের মূল কাজ, ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধের উপায় খুঁজে বের করা। মানব সমাজের চরিত্রের বহুমাত্রিক গুণাগুণকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে এই সফটওয়্যার। প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। সমপ্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা নিবন্ধটি।
গোত্র বা সমপ্রদায়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, সে অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদম তৈরি করে আচরণ বোঝার চেষ্টা করছেন  বিজ্ঞানীরা। এজন্য নানা গোত্র, বর্ণ এবং ধর্মের হাজার হাজার মানুষের আচরণের অসংখ্য নমুনা তৈরি করা হয়েছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণে কাজ করছে সফটওয়্যারটি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক দলটির প্রত্যাশা, লন্ডনের সন্ত্রাসী হামলার মতো কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্লেষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এই পদ্ধতি সরকারকে সহায়তা করবে। এছাড়া নরওয়ে এবং শ্লোভাকিয়ার মতো ক্রিশ্চিয়ান প্রধান দেশগুলোর মুসলিম অভিবাসীরা বসবাস শুরু করার পর উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হলে, সেটি সামলাতে প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তির পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
তবে এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নন, এমন একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোয়েল সারকে বলছেন, বাস্তব জীবনের পরিস্থিতি সামলাতে হলে এই প্রযুক্তির পেছনে আরো কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এটা সত্যিকার অর্থে একটি উপকারী গবেষণা হবে। যখন এটি মানুষের চিন্তার মতো পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন ধর্মীয় সহিংসতার নানা উপাদান বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে।
প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো ঘটনায় নানা ধর্ম বর্ণের মানুষ একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করে থাকে। আবার কোনো কোনো পরিস্থিতিতে এই মানুষরাই সহিংস হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন অন্য কোনো ধর্মের বা সমপ্রদায়ের মানুষ একদলের মৌলিক বিশ্বাস বা পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসেবে তারা ২০০২ সালে ভারতের গুজরাট দাঙ্গার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এই প্রকল্পে। হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে তিন দিনের দাঙ্গায় ঐ সময় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
গবেষক জাস্টিন লেন বলছেন, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির জন্য মানুষের মনো তত্ত্বও আমাদের বুঝতে হয়েছে। কারণ ধর্ম বা সংস্কৃতির মূলে রয়েছে মানসিক ধ্যানধারণার বিষয়টি। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যখন একদল মানুষের ধর্মবিশ্বাস বা মূল্যবোধের ওপর বারবার আঘাত করা হয়, তখন ধর্মীয় সহিংসতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তারপরেও যাদের মডেল হিসাবে নেওয়া হয়েছে, তার মাত্র বিশ শতাংশ সহিংসতায় জড়িয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, ধর্মীয় সহিংসতা বা সন্ত্রাস বন্ধ করতে হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে অন্য গোত্রের মানুষকে হুমকি হিসাবে ভাবা না হয়। আর এই বিষয়টিকে বাস্তবে রূপদানের জন্যই মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যারকে কাজে লাগানোর চিন্তা করা হচ্ছে।-বিবিসি
ইত্তেফাক/আরকেজি

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা