বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের সেই ‘রহস্যময়’ দম্পতি

মুঠোফোনটা ভাঙা, খানিকটা তোবড়ানো। এরই পেছনে একটি ছবি। সেটি কিন্তু তেমনই আছে। ছবিতে সেতুর ওপর দিয়ে হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছেন এক জুটি। সামনের দিকে ফিরে থাকায় তাঁদের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। গত সোমবার ইন্দোনেশিয়ায় লায়ন এয়ারের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে যাত্রীদের উদ্ধার করা জিনিসের মধ্যে পাওয়া যায় এ ভাঙা ফোন। উদ্ধার করা এসব জিনিসের ছবি প্রকাশিত হলে ভাঙা ফোনের ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। কে এই দম্পতি—এমন প্রশ্ন দেখা দেয় লোকজনের মনে। অনেকে আবেগ আপ্লুত হয় পড়েন ছবিটি দেখে। শেষ পর্যন্ত রহস্যময় সেই দম্পতির পরিচয় পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই।
বিবিসি অনলাইন ও এএফপির খবরে জানানো হয়, ইনস্টাগ্রামে ইনা ইয়ানিতা সাবিত্রী নামের এক নারীর অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট করা ছিল। কিন্তু ওই নারী বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর স্বামী ওয়াহজো নুগ্রোহানতরো। ফোনটি তাঁরই। হয়তো ছবিটি এই দম্পতির অনেক পছন্দের ছিল, যে কারণে তা মুঠোফোনের পেছনের কাভারে ব্যবহার করেন ওয়াহজো!
ওয়াহজোর ভাগনে আন্তোনিয়ো হারতোনো বিবিসিকে বলেন, ছবি লাগানো ফোনের কেসের ব্যাপারে তাঁর মা তাঁকে জানান। তখন তিনি জানতে পারেন, তাঁর মামা ওই ফ্লাইটে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যতবার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি, ততবার আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি ভাবতেই পারি না, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের কেমন লাগছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক। এক সপ্তাহ আগে পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে মামার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমরা কল্পনাও করিনি, এক সপ্তাহ পর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন!’
স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা ছেড়ে যায় জেটি-৬১০ ফ্লাইটটি। এক ঘণ্টার মধ্যে পাংকাল পিনাংয়ের দেপাতি আমির বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির। ওড়ার ১৩ মিনিটের মধ্যে কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফ্লাইটটির। শেষ মুহূর্তে পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়। বিমানটিতে তিন শিশুসহ ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া দুজন পাইলট ও ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, এটা বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের (৭৩৭-এর নতুন সংস্করণ) উড়োজাহাজের প্রথম কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা। উদ্ধারকারীরা কয়েকজনের মরদেহ এবং শিশুর জুতাসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করতে বলা হয়েছে।
আকাশে ওড়ার অল্প কিছু পরই সাগরে বিধ্বস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার উড়োজাহাজটির আগে থেকে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার দিনটির আগেই উড়োজাহাজটির ত্রুটি দেখা দেয় বলে কারিগরি লগ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উড়োজাহাজের ১৮৯ জনের কেউই বেঁচে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের পাইলট ও কো-পাইলট অভিজ্ঞ ছিলেন।
পাইলট ভাবইয়ে সুনেজা ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে জাকার্তার ভারতীয় দূতাবাস। দেওয়ালি উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল ৩১ বছর বয়সী এই পাইলটের। দেড় বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। দিল্লিতে বিবিসিকে তাঁর চাচা জানান, সুনেজার মৃত্যুর ঘটনায় পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।
লায়ন এয়ার জানায়, পাইলট ভাবইয়ে সুনেজা ছয় হাজার ঘণ্টা ও কো-পাইলট হারভিনোর পাঁচ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিনথিয়া মেলিনা, চিত্রা নুইভিতা অ্যাঞ্জেলিয়া, আলভিয়ানি হিদায়াতুল সলিখা, দময়ন্তি সিমারমাতা, মেরি ইয়ালিন্দা ও ডেনি মাওলা নামের ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে একজন ক্রু ছিলেন টেকনিশিয়ান এবং তিনজন ছিলেন শিক্ষানবিশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট।
জাকার্তার হালিম পেরদানাকুসুমা বিমানবন্দরে স্বজনহারানো পরিবারগুলো প্রিয়জনের সন্ধানে ভিড় করছে। কিছুদিন আগে বিয়ে করেন মুরতাদো কুরনিয়াওয়ান। তাঁর স্ত্রী ছিলেন উড়োজাহাজে, অফিসের কাজে গিয়েছিলেন। সজল চোখে তিনি অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরে।
কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘তাঁকে ছাড়া আমি বাঁচব না, আমি তাঁকে ভালোবাসি। তাঁকে শেষ কথাটি বলেছিলাম, সাবধানে থেকো।’
প্রথম আলো

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা