ট্রাম্প নয়, জিতলেন মোদি
- Get link
- X
- Other Apps

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে ভারত। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী সম্প্রতি ভারত সফরের সময় নয়াদিল্লির সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত সাঁজোয়া পর্যবেক্ষক ড্রোনের মতো উচ্চ প্রযুক্তির স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পেতে পারে।
এই চুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এমনকি ট্রাম্পের দুই মন্ত্রীর ভারত সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এই অনিশ্চয়তার নানা কারণের একটি হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ চরিত্র। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান প্রসঙ্গই উল্লেখযোগ্য। রাশিয়া ও ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ চলছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফর করেন। এই সফর গত এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করায় সফর স্থগিত হয়ে যায়। পরে সফরের সময় নির্ধারণ করা হয় জুলাইয়ে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অনিবার্য কারণে’ এই সফর স্থগিত করা হলো। শেষে চলতি মাসে দিল্লি সফর করলেন মার্কিন দুই মন্ত্রী। এ সফরেই স্বাক্ষরিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারতের স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার চুক্তি।

ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি করার আগে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কো ও তেহরানের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি ভেবেছে। মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সামরিক ঘনিষ্ঠতার বিরোধিতাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চুক্তির বিরোধী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বরাত দিয়ে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভারত গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে, তার শতকরা ৬২ ভাগই কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। এ ছাড়া নয়াদিল্লি মস্কোর কাছ থেকে বিমান বিধ্বংসী এস-৪০০ মডেলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে অত্যাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত। এটা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মনঃক্ষুণ্ন হলেও সেদিকে তাকায়নি মোদির ভারত। ভারতের কূটনীতিকেরা বলছেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। ভারতের নিরাপত্তার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও পাকিস্তান সফর করেন। বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান ওই বৈঠকের পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের ‘নতুন সম্পর্ক’ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে রয়েছে। এ কারণে ইরানের চাবাহার বন্দর তার চাই-ই চাই। ভারতের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নয়ন আফগানিস্তানে তাদের পিছিয়ে দিতে পারে। তাই ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর নয়াদিল্লির। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক প্রমিত পাল চৌধুরী আল-জাজিরাকে বলেছেন, ভারতের চাওয়া হলো আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কখন কমে যায়। তাতে করে আফগানিস্তানে তাদের প্রভাব আরও বাড়ানো সহজ হবে। নয়াদিল্লির বিশ্বাস, পশ্চিমাদের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক শীতল হওয়ায় আফগানিস্তানে তাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না পাকিস্তান।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সর্বশেষ চুক্তিকে ঘিরে দুই পক্ষের দর-কষাকষি ও স্বার্থ রক্ষার কথা বিবেচনায় বলা যায়, এ যাত্রায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোদিই জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অগ্রাহ্য করে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানই ধরে রাখতে পেরেছে নয়াদিল্লি। ট্রাম্প প্রশাসন নিজের অবস্থানে শুরুতে কঠোর থাকার চেষ্টা করলেও পরে নমনীয় হতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। তবে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়।

- Get link
- X
- Other Apps
Comments