থাই শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

থাইল্যান্ডের গুহা থেকে ১২ কিশোর ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। ১৭ দিন থাইল্যান্ডের বিপজ্জনক গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের উদ্ধার করেছেন দুঃসাহসী ডুবুরিরা। গতকাল বুধবার প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছে কিশোর ফুটবলারদের। চিয়াং রাই হাসপাতালের বেডে মুখে মাস্ক ও হাসপাতালের গাউন পরা অবস্থায় আছে তারা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে সবাই আনন্দিত।
গ্লাসের বাইরে অপেক্ষারত পরিবারের সদস্যদের বিজয়সূচক চিহ্ন দেখিয়েছে। নেভি সিল ফুটবলার ও কোচকে উদ্ধারকাজের একটি ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করেছে। সন্তানদের দেখে কান্নায় ভাসছেন পরিবারের সদস্যরা। মৃত্যুকূপ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিস্ময়কর উদ্ধার অভিযান শেষে এই আনন্দের অশ্রু। এটা ঠিক যেন চলচ্চিত্রের শ্বাসরুদ্ধকর কোনো কাহিনি।
চলচ্চিত্র নির্মাতারা হাতছাড়া করবেন কেন? গুহায় বেড়াতে গিয়ে আকস্মিক বন্যায় আটকে পড়া কিশোরদের নিয়ে হলিউডের দুটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ ঘটনা ২০১০ সালে চিলির কয়লাখনিতে ৬৯ দিন আটকে থাকা ৩৩ শ্রমিকের জীবনের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। ওই ঘটনা নিয়ে ২০১৫ সালে তৈরি হয়েছিল ‘দ্য ৩৩’ নামের একটি চলচ্চিত্র। এতে অভিনয় করেছিলেন অ্যান্টোনিও ব্যান্ডেরাস।
ইভানহো পিকচার্সের প্রেসিডেন্ট জন পেনোত্তি এক বিবৃতিতে বলেন, কিশোরদের উদ্ধারকাজে যুক্ত থাইল্যান্ডের নেভি সিল ও থাইল্যান্ডের সরকার ইভানহো পিকচার্সকে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে এবং ছবিটি পরিচালনা করবেন জন এম. চু। ইভানহো পিকচার্সের যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ায় অফিস রয়েছে। ‘ক্রেজি রিজ এশিয়ানস’ নামের একটি ছবির সহপ্রযোজনার কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এক টুইটে পরিচালক চু বলেন, মানুষকে উদ্ধার করার দারুণ একটি মানবিক চমৎকার গল্প এটি। কেউ যদি গল্পটির চিন্তা করে, তবে তা সঠিক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে করা উচিত।
ঘটনাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউর ফ্লিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি পারিবারিক ছবি নির্মাণের জন্য পরিচিত। পিউর ফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল স্কট বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রযোজকেরা উদ্ধারকারীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সম্ভাব্য চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে স্কট বলেন, ‘কিশোরদের নিরাপদে বের করে আনার অভিযানে থাই, পশ্চিমা, ইউরোপীয়, অস্ট্রেলীয়সহ সারা বিশ্বের মানুষ ছিল। এর একটি বৈশ্বিক আবেদন আছে। এটি বিশ্বের লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিপদের মুখে কীভাবে সত্যিকারের সাহস দেখিয়ে টিকে থাকতে হয়, চিলির শ্রমিকদের মতো এখানেও তা তুলে ধরা যাবে। তবে এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ কঠিন।
প্রত্যেক কিশোরের পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি লাগবে। কিশোরদের জায়গায় অভিনেতা ঠিক করতে খরচও লাগবে।
চলচ্চিত্রের গল্পকেও হারা মানায়
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। ১২ কিশোরের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা ওয়াইল্ড বিয়ার্স বা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য। নয় দিন গুহার ভেতরে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। অবস্থান জানার পর ১২ কিশোর ও তাদের কোচের জন্য গুহার ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি পাঠানো হয় খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম।
রয়টার্স জানায়, তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরদের কাছে অক্সিজেনের সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে প্রাণ হারান থাই নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামান গুনান। ৭ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার এক চিকিৎসক গুহায় ঢুকে কোচ ও কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্ধার অভিযান শুরুর সবুজসংকেত দেন। তাদের অবস্থানস্থলে যাওয়ার জন্য ওই পাহাড়ে শতাধিক গর্ত করা হয়। তবে সেখানে কিশোরদের না পেয়ে আগের পরিকল্পনামতো ডুবসাঁতার দিয়ে তাদের উদ্ধারে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ৮ জুলাই।
রয়টার্স জানিয়েছে, কিশোরদের বের করে আনার আগে উত্তেজনা কমানোর ওষুধ খাওয়ানো হয়। প্রথম দিন চারজন ও দ্বিতীয় দিন চারজন আর তৃতীয় দিন মঙ্গলবার চার কিশোরসহ তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়।
গুহায় থেকে যাওয়া চিকিৎসকের গল্প
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাই গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের সঙ্গে তিন দিন থেকে গিয়েছিলেন ড. হ্যারিস নামের এক চিকিৎসক। থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার একজন চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিস। তিনি খবর পান, দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি পাহাড়ের গুহার ভেতরে আটকা পড়েছে ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচ। প্রথম এক সপ্তাহ ওই কিশোরদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে জানা যায়, তারা থাম লুয়াং নামের একটি গুহার গভীরে আটকা পড়ে আছে। গুহার কিছু অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা বের হয়ে আসতে পারছিল না। কিশোরদের আটকে পড়ার খবর শোনার পর মি. হ্যারিস ছুটি বাতিল করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তাদের উদ্ধারে তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করবেন। কিশোর সদস্যদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিস গুহার ভেতরে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে না এসে কিশোরদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিশোরদের সবাইকে যে গুহার ভেতর থেকে সফলভাবে বের করা আনা সম্ভব হয়েছে, এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মি. হ্যারিসের। প্রথমে যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছেলেদের বের করে আনা হয়েছিল, তা হয়েছিল তাঁরই নির্দেশনায়।
সব কিশোরকে যখন গুহার ভেতর থেকে নিরাপদে বের করে আনা হলো, তখন সেই আনন্দে যোগ দিতে পারলেন না ড. হ্যারিস। উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই তিনি খবর পেলেন যে তার বাবা মারা গেছেন। ড. হ্যারিসকে খুঁজে বের করে ব্রিটিশ ডুবুরিরা। তারপরই তাঁকে এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে, থাই সরকারের খুব উচ্চপর্যায় থেকে তাঁকে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। বলা হচ্ছে, আটকে পড়া কিশোরদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। এ ছাড়া বের হয়ে আসার জন্য তিনি তাদের প্রস্তুত করেছেন। বিশেষ করে গুহার ভেতরে ডুবসাঁতার দেওয়ার ব্যাপারে।
বেদনাদায়ক ঘটনা
থাই গুহায় উদ্ধার অভিযান চলাকালে মারা গেছেন এক ডুবুরি। গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচের জন্য অক্সিজেন নিতে গিয়ে মারা যান তিনি। সামান গুনান ডুবুরি হিসেবে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় জ্ঞান হারিয়ে মারা যান। তাঁর কাজ ছিল পাহাড়ি সুড়ঙ্গের ভেতরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অক্সিজেন নিয়ে যাওয়া। অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার পর থাম লুয়াং গুহা থেকে বেরোনোর পাঁচ ঘণ্টার যাত্রার সময় তিনি জ্ঞান হারান। তাঁর সঙ্গী ডুবুরি তাঁকে টেনে বের করে নিয়ে আসেন এবং তাঁর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি। সামান গুনান থাই নেভির একজন সাবেক সদস্য। গুহায় কিশোরদের আটকে পড়ার খবর শুনে তিনি স্বেচ্ছায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। উদ্ধার অভিযানে গুনানের কাজ ছিল অক্সিজেন সরবরাহ করা। গুহা থেকে বের হওয়ার সময় অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে গত শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এসবিএস, বিবিসি, এএফপি।
প্রথম আলো

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা