পরিবেশবান্ধব বাঁশের চাল

পরিবেশবান্ধব বাঁশের চাল
বৃষ্টির পানি একটুও ঢুকবে না এ চাল দিয়ে। খটখটে রোদেও কংক্রিটের ছাদ বা টিনের ছাদের তুলনায় কম গরম হবে ছাদ! এমন একটি চাল যা দৃষ্টিনন্দন, শৈল্পিক এবং প্রকৃতিবান্ধব! এমন চাল তৈরি করছে 'বটপাকড় প্রাকৃতিক কৃষি খামার'। মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোরা ইউনিয়নের বালিয়াখোরায় গড়ে তোলা এ খামারটির উদ্যোক্তা ৭ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত প্রকৃতিপ্রেমী তরুণ।

'বটপাকড় প্রাকৃতিক কৃষি খামার'-এর সমন্বয়ক দেলোয়ার জাহান জানান, তাদের সংগঠনটি প্রাকৃতিক ফসল উৎপাদন ও মানুষের কাছে তা পৌছে দেওয়ার জন্য বিপণন করে থাকে। তাদের প্রতিটি পণ্য রাসায়নিক উপাদানমুক্ত এবং হরমোন, পেস্টিসাইডমুক্ত সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব। তাদের লক্ষ দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ খাদ্য মানুষের জন্য নিশ্চিত করা। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রকৃতির প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারে। এ কাজটি তাদের ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে নয় বরং এটি একটি আন্দোলন বলে দেলোয়ার জাহান উল্লেখ করেন।

বাঁশ দিয়ে ঘরের চালা কিভাবে তৈরি করা হচ্ছে এবং কেন তৈরি করছেন এমন একটি প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার জাহান বলেন, উড়া বাঁশ দিয়ে এমন চাল তৈরি করা হয়েছে। বাঁশগুলির ভেতরে থাকা গিরাগুলি ছুটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর একটির ওপর আরেকটি বাঁশ বিপরীতমুখে বসিয়ে সেগুলোেক স্ক্রু দিয়ে আটকে দিয়ে এ চাল তৈরি করা হয়। খিয়াং আদিবাসী কারিগররা এ কাজটি করে থাকেন খুব দক্ষ হাতে। চালগুলি পাহাড়ের জুমক্ষেতে থাকা মাচংঘরের আদলে তৈরি করা হয়েছে।

এ চালগুলির স্থায়ীত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে দেলোয়ার জানান, পাকা বাঁশ দিয়ে নির্মিত হলে এ চালগুলি কমপক্ষে ৩০ বছর স্থায়ী হবে। কাঁচা বাঁশ দিয়ে তৈরি হলে স্থায়ী হবে ৫ বছর।

তিনি বলেন, বাঁশ দিয়ে চাল তৈরি হলে একদিকে যেমন ঘর তৈরির খরচ অনেক কমবে, তেমনি পরিবেশের উপকার হবে। বাঁশবাগান বৃদ্ধি পাবে। ইটভাটার মতো পরিবেশ দূষণকারী কারখানা কমবে। বলাবাহুল্য, মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে আমাদের আশেপাশে ইটভাটার সংখ্যা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

দেলোয়ার বলেন, মানুষ প্রকৃতির সন্তান, মানুষের শরীর প্রাকৃতিক উপাদান। তাই কৃত্রিম কোনো কিছু প্রাণের জন্য নিরাপদ হয়। সে জায়গা থেকে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার জরুরি। সেজন্য তারা মানুষের জীবন যাপনের উপযোগী ও উপকারী প্রাকৃতিক পণ্য উৎপাদন করছেন এবং সেগুলো ব্যবহারে জোর দিচ্ছেন। এর ফলে মানুষ যেমন উপকৃত হবে, প্রকৃতিতে থাকা অন্য প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

খামারটির বয়স ২ বছর। খামারের পাশাপাশি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কৃষিপণ্য মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য 'প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র' নামে মোহাম্মদপুরের ৩/২৯ সলিমুল্লাহ রোডে একটি আউটলেট রয়েছে।

'বটপাকড় প্রাকৃতিক কৃষি খামার' প্রতিষ্ঠানটিতে যুক্ত রয়েছে প্রায় ৫শ কৃষক পরিবার।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যাতে নিরাপদ পরিবেশ রেখে যেতে পারে সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে 'বটপাকড় প্রাকৃতিক কৃষি খামার'।

ইত্তেফাক/নূহু

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা