কলকাতায় সপ্তাশ্চর্যের ছোঁয়া

 তাজমহল
কলকাতাবাসী বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য দেখে চোখ জুড়াচ্ছ, মন ভরাচ্ছে। ভাবছেন কীভাবে? প্রশ্নটা যৌক্তিক। কারণ, সপ্তাশ্চর্য তো বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে।
রহস্যটা বলছি, আসল সপ্তাশ্চর্যের আদলে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা শহরে গড়া হয়েছে সপ্তাশ্চর্য। এটা দেখেই কলকাতাবাসী সপ্তাশ্চর্য দেখার সাধ মেটাচ্ছে।
নিউটাউন কলকাতার রাজারহাটের নতুন শহর। নিউটাউনের একটি লেক ধরে ৪৮০ বর্গ একর জমিজুড়ে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক তীর্থ বা প্রাকৃতিক পার্ক। ইংরেজিতে বলা হচ্ছে ‘ইকোপার্ক’। এই পার্কেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব সপ্তাশ্চর্য।
পার্কটির উদ্বোধন হয় ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এটি নির্মাণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বা হিডকো। হিডকোর দাবি, এটিই এখন ভারতের বড় পার্ক।
পার্কে রয়েছে ১০৪ বর্গ একরের লেক। একটি দ্বীপও আছে লেকে। পার্কটি অপূর্ব সুন্দর। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্য এই পার্কে রয়েছে চিত্তবিনোদনের নানা ব্যবস্থা। আর এই ইকোপার্কের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে বর্তমান বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য। চীনের প্রাচীর থেকে মিসরের পিরামিড, আগ্রার তাজমহল থেকে জর্ডনের পেত্রা নগরী—সবই আছে এখানে। ইকোপার্কে এসে ৩০ রুপির টিকিট কেটে তা দেখে নিচ্ছে সর্বসাধারণ।

সপ্তাশ্চর্য দেখার জন্য গত ১১ নভেম্বর এই ইকোপার্কের দ্বার খুলে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিডকো।
কলকাতার বিজ্ঞান নগরী, নিক্কো পার্ক, জাদুঘর, অ্যাকোয়াটিকা ওয়াটার পার্ক বা চিড়িয়াখানা সাধারণ মানুষকে যেভাবে টানে, ঠিক একইভাবে টানছে ইকোপার্কের সপ্তাশ্চর্য।
পার্কে প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যকে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। ঠাঁই দেওয়া হয়েছে বিশ্বের ২০০টি আশ্চর্যের মধ্যে মানুষের ভোটাভুটিতে নির্বাচিত সাতটি আশ্চর্যকে। তবে প্রাচীন আশ্চর্য হিসেবে মিসরের পিরামিডকে রাখা হয়েছে বিশেষ সম্মান দিয়ে।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত ‘দ্য নিউ ওয়ান্ডারার্স ফাউন্ডেশন’ ২০০০ সালে বিশ্বের ২০০টি আশ্চর্যকে চিহ্নিত করে। এর মধ্য থেকে সাতটি আশ্চর্যকে বেছে নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী ভোটের আয়োজন করা হয়। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের ৭ জুলাই। ফলাফলে বিশ্বের বর্তমান সপ্তাশ্চর্যের নাম ঘোষিত হয়।
বর্তমানের এই সপ্তাশ্চর্য হলো চীনের মহাপ্রাচীর, জর্ডনের পেত্রা নগরী, রোমের কোলোসিয়াম, মেক্সিকোর চিচেন ইৎজা, পেরুর মাচুপিচু, ভারতের তাজমহল ও ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার।
চীনের মহাপ্রাচীরচীনের মহাপ্রাচীরচীনের মহাপ্রাচীর: বর্তমান সপ্তাশ্চার্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চীনের ঐতিহাসিক মহাপ্রাচীর। এই মহাপ্রাচীর নির্মিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে। লম্বায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার। চীনের হিসাবে ১০ হাজার লি। এক লি সমান আধা কিলোমিটার। চওড়া ১৫ ফুট থেকে ৩০ ফুট। উঁচু ২৫ ফুট পর্যন্ত। নির্মাণ করা হয়েছে পাথর, ইট ও মাটি দিয়ে।
পেত্রা নগরীপেত্রা নগরীপেত্রা নগরী: জর্ডানের এক ঐতিহাসিক নগরীর নাম পেত্রা। এটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩১২ সালে। এই পেত্রা নগরীকে বলা হতো গোলাপের শহর। প্রত্নতাত্ত্বিক উৎকর্ষে নির্মিত এই নগরী আজও দাঁড়িয়ে আছে জর্ডনে।
কোলোসিয়ামকোলোসিয়ামকোলোসিয়াম: ইটালির রোমের ফোরাম এলাকার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের সন্নিকটে অবস্থিত ফ্লেভিম্যান অ্যামফি থিয়েটারের সাধারণ নাম। ৭২-৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটি নির্মিত হয়। এটি রোম ঐতিহ্যের অমূল্য নিদর্শন। বিরাটকায় চারতলার এই ডিম্বাকৃতির রঙ্গালয়ে ৫০ হাজার দর্শক পেশাদার মল্লযোদ্ধা এবং মানুষ আর হিংস্র পশুর প্রাণপণ লড়াই দেখতে পারত।
চিচেন ইৎজা: চিচেন ইৎজা মেক্সিকোর ওয়াইস্যাটান রাজ্যে অবস্থিত। মেক্সিকোর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি গড়েছিল সেখানকার আদি মায়া সম্প্রদায়। মায়া সম্প্রদায়ের এটি ছিল বৃহত্তর নগরী।
মাচুপিচু: ১৫ শতকের এটি বিশ্ব ঐতিহ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৪৩০ মিটার উঁচুতে পেরুর কাসকো অঞ্চলে এর অবস্থান। মাচুপিচু পেরুর একটি জেলার নাম। মাচুপিচু পেরুর পুরোনো উঁচু পাহাড়চূড়া হিসেবে পরিচিত। সেখানে পাথর কেটে তৈরি হয় এই সভ্যতার। দীর্ঘদিন অজানা ছিল এই সভ্যতার কথা। ১৯১১ সালে বিশ্বের দরবারে এই ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন আমেরিকান এক ইতিহাসবিদ।
 তাজমহলতাজমহলতাজমহল: তাজমহলের অবস্থান ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে। এই ঐতিহাসিক প্রেমের স্মৃতিসৌধ গড়েন ভারতের মোগল সম্রাট শাহজাহান। সহধর্মিণী মমতাজ মহলের স্মৃতিকে জাগরুক রাখার জন্য তাজমহল গড়েন তিনি। ১৬৩২ সালে তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ২০ বছর। তাজমহল নির্মিত হয় পুরো শ্বেতপাথরে। লাগানো হয় মূল্যবান রত্ন, মণিমাণিক্য। তাজমহলের নিচে রয়েছে সম্রাট শাহজাহান ও সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের সমাধি।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারক্রাইস্ট দ্য রিডিমারক্রাইস্ট দ্য রিডিমার: অবস্থান ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোর করসোভাদো পাহাড়ের ৭০০ মিটার উঁচু চূড়ায়। এটি যিশুখ্রিষ্টের এক বিরাট স্ট্যাচু। উচ্চতা ৩০ মিটার। চওড়া ২৮ মিটার। এটির নির্মাণ শুরু হয় ১৯২২ সালে। আর সমাপ্ত হয় ১৯৩১ সালে। এর ওজন ৬৩৫ টন।
মিসরের পিরামিডমিসরের পিরামিডমিসরের পিরামিড: প্রাচীন মিসরের ফারাও সম্রাট এবং ধনবান ব্যক্তিদের সমাধি করা হতো পাথর দিয়ে বিশালকায় স্মৃতিসৌধের মাঝে, যা পিরামিড হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০-২৩০০ সালের মধ্যে মিসরে তৈরি হয়েছিল সবচেয়ে বেশি পিরামিড। পিরামিড ছিল বিশ্বের প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম। এ যুগেও এটাকে সপ্তাশ্চর্যের বিশেষ তালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রথম আলো

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা