মাতৃমৃত্যু বৃদ্ধির তথ্য মানছে না সরকার


ফাইল ছবিমাতৃমৃত্যু জরিপের তথ্য মানতে পারছেন না সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের দাবি, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার বাড়েনি বরং কমছে। আর এখন তা আগের চেয়ে অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে জরিপ প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলেছে।
ওয়েবসাইট থেকে মাতৃস্বাস্থ্য জরিপ প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ায় স্বাস্থ্য খাতের তথ্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ২২ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ মাতৃ মৃত্যু ও স্বাস্থ্য সেবা জরিপ ২০১৬: প্রাথমিক প্রতিবেদন’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৬। অর্থাৎ এক লাখ জীবিত শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৯৬ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০১০ সালের মতোই থেকে গেছে। ২০১০ সালে ছিল ১৯৪।
রাজধানীর একটি হোটেলে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ) ফয়েজ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার, নিপোর্টের মহাপরিচালক রওনক জাহান বক্তব্য দিয়েছিলেন। আর জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন সরকার ও একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের আটজন গবেষক।
অনুষ্ঠানের পর ১০৬ পৃষ্ঠার প্রাথমিক প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে দেয় নিপোর্ট। ৩ ডিসেম্বর নিপোর্ট ওয়েবসাইট থেকে সেই প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জরিপের তথ্য মানতে পারছি না।’ তিনি বলেন, দেশে ৩ হাজার ১৩১টি কেন্দ্রে মাতৃস্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কেন্দ্রে সপ্তাহে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা প্রসবসেবা দেওয়া হয়। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে মাতৃমৃত্যুর তথ্য আসে। সেই তথ্যের সঙ্গে জরিপের তথ্য মিলছে না। তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে এই জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা উচিত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদও জরিপে মাতৃমৃত্যুর হারের তথ্য মানতে নারাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমছে। কোন পদ্ধতিতে (ম্যাথডোলজি) এই জরিপ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার দরকার আছে বলে আমি মনে করি।’
দেশের সব কটি জেলার ১ হাজার ৯২২টি নগর এলাকায় এবং ২ হাজার ৮২৬টি গ্রাম এলাকায় (ক্লাস্টার) এই জরিপ করা হয়। মোট ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৪টি খানার ৩ লাখ ২১ হাজার ২১৪ নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এসব নারীর বয়স ছিল ১৩ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জরিপকারী ২২ আগস্ট ২০১৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। মৃত্যুর কারণ চিকিৎসকদের মাধ্যমে যাচাই করে নিশ্চিত করা হয়।
তবে ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো চাপ ছিল না বলে জানিয়েছেন নিপোর্টের মহাপরিচালক রওনক জাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
দেশে প্রথম মাতৃমৃত্যু জরিপ হয় ২০০১ সালে। তখন মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩২২। পরবর্তী জরিপ হয় ২০১০ সালে। এতে দেখা যায়, মাতৃমৃত্যুর হার কমে ১৯৪ হয়েছিল। ২০১৬ সালের এই জরিপে তা বেড়ে ১৯৬ হয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপোর্টই মূলত এই জরিপ করে। এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইউএসএআইডি ও ইউকে এইড। আর কারিগরি সহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য গবেবষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেজর ইভালুয়েশন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ করে আসছে। এ ছাড়া একই প্রক্রিয়ায় নগর স্বাস্থ্য জরিপও হয়েছে। হয়েছে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি জরিপ। এসব জরিপের তথ্য ও পরিসংখ্যান দেশি-বিদেশি গবেষকেরা যেমন ব্যবহার করেন, তেমনি ব্যবহার করেন নীতিনির্ধারকেরা।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কর্মপরিকল্পনা ও সফলতা পরিমাপের জন্য বিশ্বাসযোগ্য তথ্য জরুরি। প্রচারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলো না বলে তথ্য মেনে না নেওয়ার মানসিকতা বিপজ্জনক। মাতৃমৃত্যু জরিপের কারিগরি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে সরকারের কর্মসূচির সফলতা নিয়েও বিতর্ক দেখা দেবে। এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মাতৃমৃত্যুর কারণগুলো দ্রুততার সঙ্গে দূর করা।
সব

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা