পাকিস্তান ইসলামাবাদ অবরুদ্ধ: বিপদে রাষ্ট্র
- Get link
- X
- Other Apps
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পিএমএলের (এন) বিরুদ্ধে পরিচালিত অভ্যুত্থানে যে বিলম্ব হলো তা পুরো জাতির জন্যই বেদনায়ক ব্যাপার ছিল, বিশেষ করে রাজধানী ইসলামাবাদের জন্য তা খুবই অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। এই চলমান ও নৃশংস নাটকের কুশীলব বদলে যায়, কিন্তু পরিচালক ঠিকই থাকেন: রাষ্ট্রের ভেতরের রাষ্ট্র। প্রতিবাদকারীরা রাজধানীর নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পর্যন্ত চলে যাওয়ায় বোঝা যায়, এরা সফল। পাঁচ দিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সৌধ হিসেবে পরিচিত পার্লামেন্ট হাউস, সুপ্রিম কোর্ট, প্রেসিডেন্ট হাউস, প্রাইম মিনিস্টার হাউস, জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন ভবন বিদ্রোহী জনতার দ্বারা দখল হওয়ার হুমকিতে আছে। কিন্তু শেষ বিচারে জনগণকেই এর মূল্য দিতে হয়েছে, ২০১৪ সালে যাদের কয়েক মাস অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে। সুন্নি সংগঠন তেহরিক ও লাবাইকা শনিবার সর্বশেষ যে অবরোধ করল, সেটাও এর ব্যতিক্রম নয়।
গত সপ্তাহে অবরোধের সময় হাসান বিলাল নামের এক শিশুকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সে রাস্তায় মারা যায়। আর এই অভ্যুত্থান এখন এমন পর্যায়ে চলে এসেছে, যখন মনে হচ্ছে ঘটনাপ্রবাহের ওপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ নেই। রাজধানীর পুলিশ এমনিতে সাধারণ ছাত্র বা এফএটিএ সংস্কারকামী ও কিউএইউর সমর্থকদের মেরে উঠিয়ে দিলেও এই অভ্যুত্থানকারীদের ব্যাপারে নীরব। গত তিন দিনে দেখা গেল, পুলিশ এই ধর্মান্ধদের মিছিলে সহায়তা করছে। তাদের হাতে এখন একটি বিকল্পই আছে, তা হলো ইসলামাবাদকে ঘিরে ফেলা। এই শহরটি আবারও সাধারণ নাগরিকদের জন্য উপদ্রবের কারণ হয়ে উঠেছে। আর ধর্মীয় চরমপন্থীদের পথ বন্ধ করতেও এটি কার্যকর নয়।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটা শুরু হয়। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক সরকার মেয়াদ পূর্ণ করলে এবং সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে অনেকেই মনে করেছিলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো এই অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। ইসলামাবাদ ঘেরাও এই কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নাটকের প্রথম পর্বের কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে, যেটার বারবার পুনর্মঞ্চায়ন হবে। ২০১৪ সালের ২৩ মে বিরোধীদলীয় সিনেটর ইতেজাজ আহসান, রাজা রাবানি ও আমি পার্লামেন্ট হাউসের ভেতরে যখন সন্ত্রাসবিরোধী আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলাম, তখন কয়েক শ শিখ হাতে লাঠি ও মুখে স্লোগান নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে। দৃশ্যত দিন কয়েক আগে করাচিতে শিখদের পবিত্র গ্রন্থের অবমাননার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছিল। জনাকয়েক সাংসদ তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ওই ঘটনা তদন্তের আশ্বাস দেন। এরপর হলো কী, পুলিশ হঠাৎ করে রহস্যজনকভাবে শিখ প্রতিবাদকারীদের পেটাতে শুরু করে এবং সাংসদেরা দাঁতে দাঁত কামড়ে পুলিশকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
গত সপ্তাহে অবরোধের সময় হাসান বিলাল নামের এক শিশুকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সে রাস্তায় মারা যায়। আর এই অভ্যুত্থান এখন এমন পর্যায়ে চলে এসেছে, যখন মনে হচ্ছে ঘটনাপ্রবাহের ওপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ নেই। রাজধানীর পুলিশ এমনিতে সাধারণ ছাত্র বা এফএটিএ সংস্কারকামী ও কিউএইউর সমর্থকদের মেরে উঠিয়ে দিলেও এই অভ্যুত্থানকারীদের ব্যাপারে নীরব। গত তিন দিনে দেখা গেল, পুলিশ এই ধর্মান্ধদের মিছিলে সহায়তা করছে। তাদের হাতে এখন একটি বিকল্পই আছে, তা হলো ইসলামাবাদকে ঘিরে ফেলা। এই শহরটি আবারও সাধারণ নাগরিকদের জন্য উপদ্রবের কারণ হয়ে উঠেছে। আর ধর্মীয় চরমপন্থীদের পথ বন্ধ করতেও এটি কার্যকর নয়।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটা শুরু হয়। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক সরকার মেয়াদ পূর্ণ করলে এবং সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে অনেকেই মনে করেছিলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো এই অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করতে পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। ইসলামাবাদ ঘেরাও এই কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নাটকের প্রথম পর্বের কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে, যেটার বারবার পুনর্মঞ্চায়ন হবে। ২০১৪ সালের ২৩ মে বিরোধীদলীয় সিনেটর ইতেজাজ আহসান, রাজা রাবানি ও আমি পার্লামেন্ট হাউসের ভেতরে যখন সন্ত্রাসবিরোধী আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলাম, তখন কয়েক শ শিখ হাতে লাঠি ও মুখে স্লোগান নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ে। দৃশ্যত দিন কয়েক আগে করাচিতে শিখদের পবিত্র গ্রন্থের অবমাননার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছিল। জনাকয়েক সাংসদ তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ওই ঘটনা তদন্তের আশ্বাস দেন। এরপর হলো কী, পুলিশ হঠাৎ করে রহস্যজনকভাবে শিখ প্রতিবাদকারীদের পেটাতে শুরু করে এবং সাংসদেরা দাঁতে দাঁত কামড়ে পুলিশকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
কয়েক দিন পর পরিষ্কার হয়ে গেল যে অদৃশ্য শক্তি দুটি উদ্দেশে শিখদের এই মিছিলের ঘটনা সাজিয়েছিল। প্রথমত, তার কয়েক দিন পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ফলে পাকিস্তানের সংসদের ভেতরে শিখ মিছিলকারীদের ওপর হামলা হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে। এতে পরিস্থিতি বিষিয়ে উঠে পরিণামে নওয়াজের সফর বাতিল হতে পারত। দ্বিতীয়ত, শিখদের এই রেড জোনে মিছিল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা পরবর্তী সময়ে ইমরান খানের ধরনার মহড়া ছিল।
কৌতূহলের ব্যাপার হলো ইমরান খান রেড জোনে ঢোকার পর প্রকাশ্যে দাবি করে বসলেন, ইসলামাবাদ পুলিশের আইজিপির ছেলে যেহেতু তাঁর দলের সদস্য, সে জন্য তিনি স্পর্শকাতর এলাকায় মিছিলটি ঢুকতে দিয়েছেন। তিনি কি এতই বোকা, নাকি এই ঘোষণা খেলার ‘আম্পায়ার’কে লুকানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআই ও ধর্মীয় চরমপন্থীরা পর্যায়ক্রমে ইসলামাবাদ ঘেরাও করেছে। প্রতিটি ঘেরাওয়ের সময় রাষ্ট্রব্যবস্থায় বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়েছে। আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইসলামাবাদ থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে হস্তান্তরিত হয়েছে। রেঞ্জার্স কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে রকম প্রকাশ্যে পশ্চাদপসরণ করলেন, তাতে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্ষমতাসীন দল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি, নিষ্ক্রিয় কিছু প্রতিরোধ ছাড়া। সংসদকে দুর্বল ও অকার্যকর করে দলটি যে ভুল করেছিল, সেটা শোধরাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। পিএমএল(এন) পাঞ্জাবে গণজমায়েত করে সংসদে ফিরে যেতে পারে এবং এই ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসেবে নিজের মর্যাদার স্বীকৃতি পেতে পারে। অন্যান্য দলের কাছে পৌঁছানোর আগে তারা চেয়েছিল রাজনৈতিক মেরুকরণ যেন পূর্ণাঙ্গ হয়। কিন্তু তারপরও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার জন্য নওয়াজ শরিফকে দোষারোপের চেয়ে বেশি পরিহাসের কিছু হয় না। ক্রমেই উন্মোচিত হওয়া এক অভ্যুত্থানের সামনে তাঁর দল একদম ভদ্র ও বশ্যের মতো আচরণ করেছে। তারা ভেবেছিল, এ রকম বশ্য থাকলে তারা মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে। কিন্তু ইসলামাবাদের ওপর নতুন এই হামলায় বোঝা গেল, অভ্যুত্থানকারীরা আক্রমণাত্মক ঢঙে আছে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাকে ভেঙে দিতে এরা একদম মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এবারের অভ্যুত্থানের গতি কম হলেও এর সফলতা নিশ্চিত করতে বড় জাল ফেলা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মূলত দুর্নীতির অভিযোগ দুটি ফ্রন্টে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে: প্রথমত, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে দিনরাত প্রচারণা চালানো হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, সপ্রিম কোর্টের তাড়াহুড়া ও পরিষ্কার পক্ষপাত। এই আগ্রাসী প্রচারণার কারণে পাকিস্তানের প্রকৃত চ্যালেঞ্জ যেমন চরমপন্থা, সন্ত্রাসবাদ, ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা প্রভৃতি দৃষ্টির বাইরে চলে যাচ্ছে। ওদিকে চরমপন্থী দলগুলো নানা কায়দায় সরকারের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সামরিক নীতির স্বাধীন সমালোচকদেরও এরা ডান্ডা মারছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মূল ধারায় চলে আসা দেখে বোঝা যায়, এনএপির উল্টো ফল হয়েছে। ইসলামাবাদ অচল করে দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটানো গেলেও পাকিস্তানের ওপর এর অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়বে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সাম্প্রতিক নজির থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments