পুলিশ নয়, মেয়ের ধর্ষণকারীকে তাড়া করে ধরলেন বাবা
পুলিশের কাছে জমা দেয়া অভিযোগে মেয়েটি জানিয়েছে সে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধর্ষকদের সাথে লড়াই চালিয়ে গেছে
ভারতে রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের শিকার এক তরুণী থানায় থানায় ঘুরেও পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি। অথচ তার বাবা-মা দু'জনেই রেল পুলিশে চাকরি করেন। এরপর বাবা নিজেই রাস্তায় ধর্ষণকারীদের একজনকে তাড়া করে আটক করলেন।
এ ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপালে। তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়ে সরকার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। চার কথিত ধর্ষণকারীর চারজনই এখন পুলিশের হেফাজতে।
১৯ বছরে বয়সী এক তরুণী সন্ধ্যেবেলায় একটি কোচিং ক্লাস থেকে বাড়ি ফিরছিল ভোপালের অতি ব্যস্ত হাবিবগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে। সেখানেই দুই ব্যক্তি মদ্যপান করার সময়ে মেয়েটিকে টেনে নিয়ে যায় পাশের একটি কালভার্টের কাছে। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ করা হয় তাকে।
পুলিশের কাছে জমা দেয়া অভিযোগে মেয়েটি জানিয়েছে সে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধর্ষকদের সাথে লড়াই চালিয়ে গেছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু একসময়ে তারা মেয়েটিকে বেঁধে ফেলে। তারপরেই নির্যাতন শুরু হয়।
এমনকি তারা বিড়ি- সিগারেট খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে বিরতিও নিচ্ছিল বলে মেয়েটি জানিয়েছে।
একসময়ে আরো দু'জন যোগ দেয় ধর্ষকদের সাথে।
একসময়ে আরো দু'জন যোগ দেয় ধর্ষকদের সাথে।
প্রায় তিন ঘণ্টা অত্যাচার চালানোর পরে ছাড়া পায় মেয়েটি।
প্রথমেই সে কাছের রেল পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করে, কিন্তু তার অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।
মেয়েটির বাবা-মা দু'জনেই রেলপুলিশেরই কর্মকর্তা।
মেয়েটির বাবা-মা দু'জনেই রেলপুলিশেরই কর্মকর্তা।
ভোপালের অতিরিক্ত রেলপুলিশ সুপার ধর্মেন্দ্র সিং সেটা স্বীকারও করলেন। তার কথায়, "ঠিকই, এফআইআর দায়ের করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। সেদিন রাতে অভিযোগ কেন জমা পড়ে নি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরের দিন সকালে নির্যাতিতা মেয়েটি আসার সাথে সাথে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।"
থানা থেকে মেয়েকে নিয়ে ফেরার পথেই মেয়েটি একজন ধর্ষককে দেখে চিনতে পারে। তার পুলিশ কর্মকর্তা বাবা দৌঁড়ে গিয়ে একজন ধর্ষককে ধরে ফেলেন।
পুলিশ তারপরে বাকিদের গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে একজন সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের অভিযোগ দায়ের করতে না চাওয়া নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলেছে ভোপালে। বিক্ষোভের জেরে শুক্রবার সরকার আরো পাঁচপুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও নারী আন্দোলনের কর্মী সুনন্দা মুখার্জী বলছিলেন, "মেয়েটি তো পুলিশের কাছে গিয়েছিল প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু পুলিশের সেই একই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা! এই মেয়েটির বাবা নাহয় পুলিশ, তাই দৌড়ে একজনকে ধরে ফেলে টেনে নিয়ে গেছেন থানায়। কিন্তু সবাই তো আর তা পারে না।"
কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, কেউ একদম চুপ করে থাকে, বলছিলেন মিসেস মুখার্জি।
২০১২ সালে দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। অভূতপূর্বভাবে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজায়। নির্ভয়া নামে পরিচিতি পাওয়া ওই মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন দিল্লি আর পরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে সেরা চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যায় নি। তার ধর্ষকরাও সবাই ধরা পড়ে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালে দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সারা দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। অভূতপূর্বভাবে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজায়। নির্ভয়া নামে পরিচিতি পাওয়া ওই মেয়েটিকে বেশ কিছুদিন দিল্লি আর পরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে সেরা চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যায় নি। তার ধর্ষকরাও সবাই ধরা পড়ে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।
Comments