সাগরে বন্ধুতার অনুশীলন

সাগরের সেই রুদ্র মূর্তি নেই। একেবারে শান্ত-সুবোধ রূপ। তার বুক চিরে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলেছে সামরিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত দেশ-বিদেশের ৪১টি যুদ্ধজাহাজ। তবে যুদ্ধ নয়, বন্ধুত্বের অনুশীলনে এসব জাহাজ নেমেছে সাগরে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে এবারই প্রথম বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া। দুই দিনের মহড়া শেষ হবে ২৯ নভেম্বর।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজারের ইনানী সৈকতসংলগ্ন হোটেল রয়াল টিউলিপে এ আন্তর্জাতিক মহড়ার উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজগুলো (ফ্লিট রিভিউ) পরিদর্শন করেন। পরে তিনি এ নিয়ে আয়োজিত সৈকত উৎসবেও (বিচ কার্নিভ্যাল) অংশ নেন।
ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) এই মহড়ার আয়োজক। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাল্টিল্যাটারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ’ (ইমসারেক্স)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, একটি দেশের একার পক্ষে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথাও স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের পক্ষে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। একাধিক ঘটনা দেখিয়েছে যৌথ উদ্যোগ ছাড়া নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তিনি ব্লু-ইকোনমির প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি। সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মহড়া এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলা ও সমুদ্র রক্ষায় বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও সুদৃঢ় করবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা বলেন, আইওএনএস শুধু ভারত মহাসাগর অঞ্চলের নয়, বরং এশিয়া-প্যাসিফিক ও সংলগ্ন অঞ্চলের আশার প্রতীক।
মহড়ায় অংশ নিতে আসা বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারতের নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা, মিয়ানমারের নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল টিন অং ফান ছাড়াও মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীর প্রধান ট্যান ফ্রি আহমেদ কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আইওএনএসের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ১৫টি দেশের প্রতিনিধিরাও এসেছেন।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমুদ্রবিষয়ক সহযোগিতা বাড়াতে আইওএনএস কাজ করে। ২৩টি দেশ এর সদস্য। এ ছাড়া নয়টি দেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। সদস্যদেশগুলোর নৌবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানে আইওএনএস কাজ করে থাকে। ২০০৮ সালে আইওএনএস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বর্তমান চেয়ারম্যান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নিজামউদ্দিন আহমেদ।
মহড়া উপলক্ষে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ইনানী পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ সজ্জিত করা হয়। পুরো ইনানী বিচকে সাজানো হয় বর্ণাঢ্য সাজে। ইনানী সৈকতে স্থাপন করা হয় কার্নিভ্যালের মঞ্চ। জাহাজের মতো করে তৈরি করে এই মঞ্চে প্রদর্শন করা হয় দেড় শতাধিক শিল্পীর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। রাষ্ট্রপতি, আগত অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সৈকতে বসে এসব দৃশ্য দেখেন। মহড়া দেখতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকেরা কক্সবাজারে হাজির হন।
 নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, এ মহড়ায় ভারতের চারটি যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও একটি মেরিটাইম এয়ারক্র্যাফট ও একটি হেলিকপ্টার অংশ নিচ্ছে। ভারত ছাড়া অন্য যেসব যুদ্ধজাহাজ থাকছে সেগুলো হলো চীনের একটি, ইন্দোনেশিয়ার একটি ও ইরানের দুটি। সব মিলিয়ে ৪১টি যুদ্ধজাহাজের আটটি বিদেশি, আর বাকি ৩৩টি জাহাজ বাংলাদেশের। সবগুলো জাহাজের নেতৃত্ব দেবে বিএনএস বঙ্গবন্ধু। জাহাজগুলোর চলার সময় আকাশে উড়বে ৩টি মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট ও ৭টি হেলিকপ্টার।
এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজে আগুন লাগলে কীভাবে তা নেভাতে হয়, জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে তা কীভাবে উদ্ধার করতে হয়, কীভাবে গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান করতে হয়, সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান কী করে চালানো হয়, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান হলে ও বাণিজ্যিক জাহাজে আগুন লাগলে সেই জাহাজকে কী করে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় তার সবই দেখানো হবে। জাহাজগুলো আজ ভোর থেকে মহড়া করতে করতে গভীর সমুদ্রে চলে যাবে। এভাবেই ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে নিজ দেশে ফেরত যাবে জাহাজগুলো। আর এর মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে দুই দিনের সামুদ্রিক মহড়া।
সব

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা