ঢাকার শিশুকে বাঁচালেন এ পারের চিকিৎসক / পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

Azmaine Kibria

দুই চিত্র: ব্রঙ্কোস্কপি চলছে ঢাকার হাসপাতালে (বাঁ দিকে) এখন আজমাইন কিব্রিয়া। নিজস্ব চিত্র

ভিআইপি নয়। তবু একরত্তি আজমাইনকে সুস্থ করে তুলতে দু’দেশের চিকিৎসকেরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বেন— তা কল্পনাও করতে পারেননি বাবা-মা! সকলের চেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে সদ্যোজাত। কাঁটাতারের বেড়া, নিয়মের পাঁচিল, কূটনৈতিক কচকচি পিছনে ফেলে জিতল মানবিকতা।
গুরুতর অসুস্থ আজমাইন ভেন্টিলেশনে ছিল বলে চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে আনা যাচ্ছিল না। তা হলে উপায়? শেষ পর্যন্ত কলকাতার শিশুবক্ষ-বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়কে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় উড়িয়ে নিয়ে যেতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁর ভিসা, বাংলাদেশের মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন (বিদেশ থেকে চিকিৎসক গিয়ে অস্ত্রোপচার করলে তার প্রয়োজন) ও প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ব্যবস্থা হয়েছিল। ঢাকা বিমানবন্দরে ওই চিকিৎসককে সিকিউরিটি চেকের জন্য দাঁড়াতে হয়নি, লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। আবার বিমানবন্দর থেকে ঢাকা কম্যান্ড হাসপাতালে (এখানেই ভর্তি ছিল শিশুটি) যন্ত্রপাতি-সহ চিকিৎসককে দ্রুত পৌঁছে দিতে তাঁর যাতায়াতের সব রাস্তার সিগনালের আলো সবুজ করে রাখা হয়েছিল।
আজমাইন কিব্রিয়া। সিলেটের খুদে ছেলেটির জন্ম ১০ অগস্ট। জন্মের কয়েক দিন পর আচমকা বিষম লেগে ফুসফুসে দুধ ঢুকে দম আটকে যায় তার। সেই থেকে টানা এক মাস তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের শিশু-ফুসফুস বিশেষজ্ঞ লুৎফুল কবীরের কথায়, ‘‘আজমাইনের ব্রঙ্কোস্কোপি দরকার ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও সব হাসপাতালে নবজাতকদের ব্রঙ্কোস্কোপি চালু হয়নি। তখন থেকেই ভারত থেকে চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি আনার ভাবনা শুরু।’’ আজমাইনের সম্পর্কে ঠাকুমা হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক চিকিৎসক-কর্নেল নুরুন নাহার ফতিমা। তিনিই বাচ্চার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন। ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ-ডাক্তার আনার ব্যাপারে তিনিই প্রধান ভূমিকা নেন। ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-র হাসপাতালে এই ব্রঙ্কোস্কোপি দেখতে ভিড় করেছিলেন প্রায় ৪০ জন চিকিৎসক।
আজমাইনের পরিবার সূত্রের খবর, প্রথমে দিল্লির এইমস-এ যোগাযোগ করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সে সময় পশ্চিমবঙ্গের একটি চিকিৎসক দল একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে কলকাতার নবজাতক-ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্রোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারেন কম্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। পল্লববাবুর কথায়, ‘‘মাত্র দু’দিনে ভিসা-সহ সব কাগজ তৈরি হয়ে যায়! ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাসপাতালে পৌঁছই। শিশুটিকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করলেই তার ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল। কখনও আবার এক বার শ্বাস নিয়েই গোটা শরীর নীল হয়ে যাচ্ছিল।’’
পল্লববাবু আরও জানান, আজমাইনের ল্যারিংগসের ভিতর একটা জালের মতো পর্দা তৈরি হয়ে গিয়েছিল আসলে। ব্রঙ্কোস্কোপি করে সেটা ফাটিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটি নিঃশ্বাস নেওয়া শুরু করে। তার দিন দশেক পরে সে বাড়ি যায়। সেখানে বিশেষ যত্নে থেকে এখন আজমাইন বিপন্মুক্ত।
ছোট্ট আজমাইনের বাবা শারাফুল কিব্রিয়া ব্যাঙ্কের অফিসার, মা নাদিয়া গৃহবধূ। আজমাইন তাঁদের প্রথম সন্তান। টেলিফোনে শারাফুল বলেন, ‘‘ছেলে এখন হাসছে, খাচ্ছে, খেলছে। দু’দেশের ডাক্তারবাবুদের সাহায্যে ওকে ফিরে পেলাম।’’ ভারতের  শিশু চিকিৎসকদের সংগঠন  ইন্ডিয়ান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সচিব কেয়া উত্তম ঘোষের কথায়, ‘‘মানুষ যদি শুধু মানুষের জন্য এই ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, তা হলে সব সীমান্ত ধুয়েমুছে দেওয়া যায়।’’

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা