পেঁয়াজের ১০০!
- Get link
- X
- Other Apps
পেঁয়াজের দামে যেন আগুন লেগেছে। বাজারে গিয়ে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির গায়ে হাত দিলে ছ্যাঁকা লাগতে পারে। দেশি পেঁয়াজের কেজিতে দর উঠেছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দর ৮০-৮৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছর এই সময়ে বাজারে পেঁয়াজের দর কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ছিল।
দেশে কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের দাম চড়া। আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে ভারত। গত বৃহস্পতিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন মূল্য (এমইপি) টনপ্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এতে কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬৯ টাকা। ভারতের এ সিদ্ধান্ত পাইকারি বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পর এক দিনেই আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়ে যায়। এর সঙ্গে লাফ দেয় দেশি পেঁয়াজের দামও, বেড়ে যায় কেজিতে ১০ টাকা।
রাজধানীর বাজারে এখন বড় দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও ছোট দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় মাঝারি লাল পেঁয়াজ কেজিতে ৮০-৮৫ টাকা, বড় আকারের পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকা। অবশ্য আগে কিনে রাখা পেঁয়াজ কোনো কোনো বিক্রেতা কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন।
দেশে গত মৌসুমে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। আমদানিও আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। তারপরও সরবরাহে ঘাটতির কারণ দেখিয়ে বাজারে দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে গতকাল শনিবার ফুটপাতের একজন দোকানদার দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা চান। শুনে খেপে যান পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা কায়সার হোসেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে কিনেছি কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে। এখন ১০০ টাকা চাইছে। এত দাম তো কখনো দেখিনি।’
কারওয়ান বাজার আড়তে গতকাল প্রতি এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ৪২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এতে কেজিপ্রতি দর দাঁড়ায় ৮৪ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা এ পেঁয়াজ কিনে বাছাই করে বড়টা ১০০ টাকা ও ছোটটা ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেন। আড়তে ভারতীয় দুই রকমের পেঁয়াজ প্রতি ৫ কেজি ৩৭০-৩৮০ টাকা দর ছিল।
আড়তের বিক্রেতা নোয়াব আলী প্রথম আলোকে বলেন, দাম আগে থেকেই বেশি ছিল। ভারতে দাম বাড়ায় শুক্রবার দেশেও বেড়ে গেছে।
সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা কত, তার কোনো সমীক্ষাভিত্তিক হিসাব নেই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গত এপ্রিল ও আগস্ট মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যপত্রে পেঁয়াজের চাহিদা কত, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আলোচ্য সময়ে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন।
গত মৌসুমে উৎপাদিত দেশি পেঁয়াজ এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ কেমন, জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে সরবরাহ চাহিদার চেয়ে কম। দেশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এবার যারা পেঁয়াজ রেখেছিল, তারা ভালো লাভ করেছে।’
বিবিএসের ২০১৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে গড়ে ১১ টাকা ৪৪ পয়সা খরচ হয়। দেশের অনেক চাষি ঘরের মাচায় পেঁয়াজ রেখে দেন, যা মৌসুম শেষে বিক্রি করেন। অনেক ফড়িয়া ব্যবসায়ীও পেঁয়াজ কিনে রাখেন লাভের আশায়।
রপ্তানিমূল্য বেঁধে দিল ভারত
ভারতের সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার ঠিক করে দেয়। এর মানে হলো, বাংলাদেশসহ অন্য দেশের আমদানিকারকেরা ভারত থেকে এর চেয়ে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। পেঁয়াজের এ ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন শহরে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৬০ রুপিতে উঠেছে। এর কারণ বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম চড়ে গেলে ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের শেষ দিকে দেশটি ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৭০০ ডলার করেছিল, যা ওই বছরের ডিসেম্বরে তুলে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে নভেম্বরের শেষ দিকে সাধারণত নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করে। কিন্তু গত মাসে তিন দিনের টানা বৃষ্টি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments