লন্ডনে ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক’
- Get link
- X
- Other Apps
লন্ডনে দ্বিতীয়বারের মতো হলো ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক’। ছবি: প্রথম আলোআয়োজকদের প্রত্যাশা ছিল লন্ডনে ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক’ নিয়ে বছর বছর আগ্রহ বাড়বে, ধীরে ধীরে বাড়বে এর পরিসর। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক’ এর দ্বিতীয় সফল আয়োজন সেই প্রত্যাশার পালে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগ করবে নিঃসন্দেহে।
দ্বিতীয় আয়োজনে অংশগ্রহণকারী ডিজাইনারদের সংখ্যাই কেবল বাড়েনি, বেড়েছে এর টিকিটের চাহিদাও। প্রথমবারের ভুল-ভ্রান্তি এড়িয়ে এবারের আয়োজন ছিল আরও বেশি সুশৃঙ্খল।
শনিবার রাতে লন্ডনের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ক্যানারি ওয়ার্ফের অভিজাত ইস্ট উন্টার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক-২০১৭’। ২০১৬ সালে এই মিলনায়তনেই যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশি ফ্যাশনের নান্দনিক এই আয়োজন। আয়োজক ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন কাউন্সিল ইউকে’। এক দিনে হলেও এ ধরনের আয়োজনকে ‘উইক’ হিসেবেই অভিহিত করা হয়।সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজতেই পুরো মিলনায়তনের আলো কমে গেল। উজ্জ্বল হয়ে উঠল টি-আকৃতির মঞ্চের বাতি। উপস্থাপক মমতাজ বেগম ও আবদুর রহমান সংক্ষেপে তুলে ধরলেন আয়োজনের বিস্তারিত। এরপরই মঞ্চের পেছন থেকে বেজে উঠল সংগীতের সুর। একে একে মঞ্চে হাজির হলেন র্যাম্প মডেলরা। তাদের গায়ে শোভা পেল বাঙালি পোশাকের বাহারি সব নকশা আর কারুকাজ। বাংলাদেশি ঐতিহ্যের সঙ্গে পশ্চিমা ভাবনার মিশেল শাড়ি, সালোয়ার-কামিজসহ নানা ঢঙের পোশাকে এনে দিয়েছে ভিন্নতা। আবার অতি পরিচিত বাঙালিয়ানা নকশার পোশাকগুলো কেবল পরিধানের ভিন্নতার কারণে ফুটিয়ে তুলছে পাশ্চাত্য আভিজাত্য। এবারের টাইটেল ডিজাইনার হিসেবে শুরুতেই প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য নকশাকার রিনা লতিফের কারুকাজ। মাঝখানে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে শো চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।
গত বছর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকে মোট নয়জন ডিজাইনার অংশ নিয়েছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪। এর মধ্যে আটজন অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে। ছিলেন বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ‘মায়াসি’ ব্র্যান্ডের কর্ণধার মাহীন খান, চন্দন-এর চন্দনা দেওয়ান, বিবিয়ানার লিপি খন্দকার, কুহুস ওয়ারেবলস আর্টসের কুহু, রিনা লতিফ, জুরহেমের মেহরুজ মুনির, শাহার রহমান ও জেড অ্যান্ড জেড কালেকশনসের মেহজাবিন মুজতাফিজ সিমিলি।
যুক্তরাজ্য থেকে ইমান বুটিকসের মির্জা মিয়া, আশেকা হোসাইন, ফরিদাস ডিজাইনের ফরিদা রশিদ, রুজি লন্ডনের কর্ণধার শানিতা আক্তার ও প্রীতি ব্র্যান্ডের হোসনেয়ারা চৌধুরীর নকশা করা পোশাক প্রদর্শিত হয়। জুয়েলারি পণ্যের প্রদর্শনী করতে দুবাই থেকে আসেন নীহারিকা মমতাজ। এসব ডিজাইনারদের সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
বাঙালিয়ানা নকশার পোশাকগুলো কেবল পরিধানের ভিন্নতার কারণে ফুটিয়ে তুলছে পাশ্চাত্য আভিজাত্য।বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহীন খান প্রথম আলোকে বলেন, লন্ডনের মতো শহরে বাংলাদেশের ফ্যাশন পণ্য নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন বেশ আনন্দের। বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের নকশার যে মেজাজ, বুনন ও কারুকাজ সেটিই বাঙালির আসল ঐতিহ্য। পাশ্চাত্যের ছোঁয়ার মিশেলে বাংলাদেশি পোশাকের আভিজাত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রদর্শনীতে কোনো কোনো ডিজাইনারের পোশাকে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য দেখে তিনি বলেন, পোশাকপরিচ্ছদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকে সেই স্বাতন্ত্র্যকে তুলে ধরাটাই আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
ডিজাইনারেরা বলেন, যুক্তরাজ্যে মূলধারার ফ্যাশন নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি। এতে বাংলাদেশি ফ্যাশনকে যুক্তরাজ্যের মূলধারার ব্যক্তিদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কাজটা আরও সহজ হবে। ভবিষ্যৎ আয়োজনগুলো আরও নান্দনিক ও সার্থক হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
জমকালো ‘বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক’। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশি পোশাকের বৈচিত্র্যময় রূপ দেখে যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা তরুণীরাও বেশ অভিভূত। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকের এই আয়োজন তাদের বেশ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি ডিজাইনার ও তাদের চমৎকার কাজগুলো সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছেন। লিসা নামের এক তরুণী বলেন, পরিধানের ভিন্নতা যে বাঙালি পোশাকে এতটা সাহসী ভাব এনে দিতে পারে, তা আগে বুঝতে পারেননি তিনি।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments