প্রধান বিচারপতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ফাইল ছবি
কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়ার পর কবে দেশ ছাড়ছেন, সেদিকে এখন সবার নজর। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার সকালে মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গতকাল দুপুরে হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. এ কে এম সালেক।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ এবং প্রধান বিচারপতির ভাগ্নে শুভ গতকাল প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান।
গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ক্যাম্পাসে যান প্রধান বিচারপতি। ওই সময় সেখানকার লোকজনের মধ্যে দেখা দেয় কৌতূহল। প্রথমে কেউ কেউ মনে করে, প্রধান বিচারপতি ওই ক্যাম্পাসের মিলনায়তনে কোনো অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে এসেছেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল ভাঙে। সবাই দেখতে পায় প্রধান বিচারপতি ঢুকছেন ওই ক্যাম্পাসের ডায়াগনস্টিক ল্যাব ভবনে। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করার পর যথারীতি বেরিয়ে যান। সেখানে তিনি কয়েকটি পরীক্ষা করান।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে বেরিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক ইউনিটের ইনফরমেশন ডেস্কের দায়িত্বে থাকা নূরুন্নাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি এসেছিলেন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। তিনি স্লিপ নিয়ে এসেছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু স্যাম্পল দিয়ে গেছেন। তবে ঠিক কী পরীক্ষার স্যাম্পল দিয়েছেন তা যেকোনো রোগীর চিকিৎসাবিষয়ক ব্যক্তিগত অধিকার সুরক্ষাসংক্রান্ত নীতি-নৈতিকতার কারণেই প্রকাশ করা যাবে না। ’
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ২ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে আছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এরই মধ্যে গত ৫ অক্টোবর তিনি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করেন। সেদিন তিনি ও তাঁর সহধর্মিণী গুলশান ২ নম্বর সার্কেলে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সেন্টারে যান। সেখানে তাঁরা বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাসায় ফেরেন। ওই দিন বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির বাসায় যান এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর প্রধান বিচারপতি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান পূজা দিতে। সেখানে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তর সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। গত ৬ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসায় যান প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই তাঁর বাসায় যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন ও চিকিৎসক। বিশেষ করে বিএসএমএমইউর অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী নিয়মিতভাবে দেখছেন প্রধান বিচারপতিকে। গতকাল দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. এ কে এম সালেক প্রধান বিচারপতির বাসায় যান। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তিনি বেরিয়ে যান।
প্রধান বিচারপতির ভাগ্নে শুভ যান সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে আর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ যান সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে।
আইনজীবী সমিতির একাংশের সংবাদ সম্মেলন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সরকার সমর্থক অংশের নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহ। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবদুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সভাপতি ও সম্পাদক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নামে ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন, আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। সমিতির পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে বিচারকার্য পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করা। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির ছুটিসংক্রান্ত কোনোরূপ বিবৃতি ও বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। ’
অপর অংশের মানববন্ধন
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাবেক মন্ত্রী নুর মোহাম্মদ, নিতাই রায় চৌধুরী, আবেদ রাজা, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কোনো সভ্য দেশে, গণতান্ত্রিক দেশে কোনো দিন শুনিনি প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করেছেন। এখনো তিনি সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছেন। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। তিনি সরকারের হেফাজতে এখন আছেন। আমাদের আইনজীবী নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। ’ তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত ভালো অবস্থায় আছেন। আমি তাঁর কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখি নাই। তিনি লক্ষ্মীপূজায়, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন কার্যালয়ে গিয়েছেন। ’
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আওয়ামী আইনজীবীরা বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি আপনি যদি রায় বাতিল না করেন, তাহলে বন্ধের পর আপনাকে আর বসতে দেওয়া হবে না। এরই প্রতিফলন হিসেবে জোর করে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ’
রাশিয়া ফেডারেশনের প্রধান বিচারপতি আসছেন আজ
রাশিয়া ফেডারেশনের প্রধান বিচারপতি ভায়াচেসলাভ এম লেভদেভ বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনে আসছেন আজ সোমবার। এ দিন দুই দেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আজ সকাল ১১টায় একটি অনুষ্ঠান হবে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা সমঝোতা স্মারকে সই করবেন। সমঝোতা স্মারকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সই করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আমন্ত্রণেই রাশিয়া ফেডারেশেনের প্রধান বিচারপতি আসছেন।
Comments