এ যেন রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞার মতো অবস্থা, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। বলছি, ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গে।
শুক্রবার বেশ জমকালো আয়োজনে ঘোষণা করা হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার বিজয়ীর নাম। ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যে ঝড় উঠেছে তা এখনো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহমান। জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল নামের যে প্রতিযোগীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে তিনি নাকি বিচারকদের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। মূলত বিচারকরা যাচাই-বাছাইয়ের পর যাকে প্রথম নির্বাচিত করেছিলেন আয়োজকদের নির্দেশে তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলকে।

এমন ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন সেদিনের বিচারকরাও। কিন্তু নতুন করে এই তর্ক-বিতর্কের কফিনে আরও একটি পেরেক ঠুকল এভ্রিলের বিয়ের ঘটনা। খোঁজ-খবর নিয়ে এমনটাই জানা গেছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এভ্রিলের বিয়ের খবর নিশ্চিত করেছেন। বিবাহিত কোনো মহিলা এই প্রতিযোগিতায় অযোগ্য। এছাড়া এভ্রিলের বিয়ে এবং কাবিনামার কয়েকটি আলোকচিত্রও গণমাধ্যমে এসেছে। কাবিন ছিল ৮ লাখ টাকার। যার উসুল ধরা হয় তিন লাখ টাকার। এভ্রিলের স্বামী একজন মাদ্রাসার ছাত্র। নাম মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিন। তবে তারা এখন আর স্বামী-স্ত্রী নন। ইতিমধ্যে তাদের বিচ্ছেদও ঘটে গেছে। এভ্রিলের জন্ম ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। এভ্রিলের বিয়ে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, এভ্রিলের বিয়ে হয়েছিল। সে সংসার বেশিদিন টেকেনি শুনেছিলাম। এছাড়া একবার চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে তাকে নাকি আটকও করা হয়েছিল। তবে ডিভোর্সের পর আর তার কোনো খোঁজ-খবর জানি না। অন্যদিকে, জান্নাতুলের সাবেক স্বামী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিন জানান, তার সঙ্গে জান্নাতুল নাঈমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই মাস জান্নাতুল তাদের বাড়িতে ছিল। এরপর বাপের বাড়িতে নাইওর যায়। দুদিন পর এক রাতে জান্নাতুলের বাবা ফোন করে বলেন, মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজে বের করতে বলেন। কিন্তু জান্নাতুলকে খুঁজে বের করতে মুনজুর রাজি হননি। মুনজুর উদ্দিন আরও বলেন, এরপর জান্নাতুল তাকে ফোন করে ডিভোর্স দিতে বলে। অন্যথায় সে নিজেই ডিভোর্স দেবে। ডিভোর্সের জন্য মুনজুর সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করেন। পরে দুই পক্ষের সমঝোতায় নগরের লালদীঘি পারের একটি হোটেলে ২০১৩ সালের ১১ জুন কাজীর উপস্থিতিতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এদিকে, এভ্রিলকে নিয়ে নিত্য নতুন গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। ঝড় বইয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে। সবার একটাই প্রশ্ন এ ধরনের একটি প্রতিযোগিতাকে কেন কলুষিত করা হলো? মিস ওয়ার্ল্ডের মতো একটি প্রতিযোগিতায় যাকে পাঠানো হচ্ছে তিনি কীভাবে ‘মিসেস’ হতে পারেন। নিত্যনতুন প্রশ্ন ঘিরে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। কেউ কেউ এটাও বলছেন, এভ্রিলকে ঘিরে হয়তো আরও মুখরোচক গল্প পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই খবর রটে, জান্নাতুলের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ খেতাব’ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘তার বিয়ের কাগজপত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদি ক্রস চেক করছি। প্রমাণিত হলে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবো। তবে এ বিষয়ে আরও দু-একদিন লাগতে পারে। ’

Comments