পুরস্কার / দেহঘড়ির হদিস দিয়ে নোবেল জয় তিন মার্কিনের সাব্বির রহমান খান,/ সুইডেন থেকে
সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট থেকে গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করতে গিয়ে কমিটির স্থায়ী সদস্য জুলিয়ান জিয়ারাথ বলেন, যথাযথ উপায়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য কেন ও কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিজয়ীত্রয়ের গবেষণা সে বিষয়ে আরো জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে।
নোবেল কমিটির ঘোষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির সঙ্গে তাল মেলানোর উপযোগী করে তৈরি হয়েছে মানবদেহ। বহু বছর ধরে মানুষসহ পৃথিবীর অন্যান্য জীবের দেহে এক ধরনের জৈবিক ঘড়ির উপস্থিতির কথা সবার জানা। কিন্তু কিভাবে এই দেহঘড়ি কাজ করে তা অজানা ছিল এত দিন পর্যন্ত। জেফ্রি সি হল, মাইকেল রোজবাস ও মাইকেল ডাব্লিউ ইয়াং তাঁদের অনেক বছরের গবেষণায় এই জৈবিক ঘড়ির কর্মপ্রক্রিয়া প্রমাণসহ হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কিভাবে মানব তথা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রিত ‘জৈবিক ছন্দ’ ঘূর্ণমান পৃথিবীর দিন-রাতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
নোবেলজয়ীরা গবেষণাগারে একটি ‘ফল মাছিকে’ নমুনা হিসেবে ব্যবহার করেন। মাছির এমন একটি জিনকে তাঁরা আলাদা করেন যেটা দেহের দৈনন্দিন জৈবিক ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁরা দেখিয়েছেন, জিনটি রাতের বেলায় একটি প্রোটিনের ভেতরে ঊহপড়ফব বা সাংকেতিক সিগন্যাল স্তুপাকারে জমা করে এবং দিনের বেলায় তা অধঃপতিত বা উবমত্ধফবফ করে।
পরে তাঁরা আরো একটি প্রোটিন উপাদান চিহ্নিত করেন, যেটি কোষের ভেতরের ওই জৈবিক ঘড়ির প্রক্রিয়াটিকে স্বয়ংক্রিয় মেশিন হিসেবে সচল রেখেছে। তাঁদের এই মহান আবিষ্কারের কল্যাণে এখন এটা স্পষ্ট, বহুকোষীয় জীব বিশেষ করে মানুষের শরীরে একটি দেহঘড়ি বিদ্যমান। যা আমাদের আচরণ, হরমোনের মাত্রা, ঘুম, শরীরের তাপমাত্রা ও বিপাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে।
নোবেল কমিটির প্রেসরুম থেকে জেফ্রি হলকে ফোন করা হলে তিনি খুব সংক্ষেপে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত সম্মানিতবোধ করছি। আমার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হলো—আমি ‘বাকশূন্য’। শব্দের খুব অভাব বোধ করছি। মানবজাতির জন্য এমন একটি দেহঘড়ি প্রয়োজন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চালিত করবে; যেমন, ঘুম, হরমোনের স্তর, শরীরের তাপমাত্রা, বিপাক ইত্যাদি। ’
জেফ্রি সি. হল ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি করেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্যাসাডোনায় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টরেট গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে ওয়ালথ্যামের ব্র্যান্ডিস ইউনিভার্সিটিতে কাজ করে ২০০২ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব মেইনিতে যোগ দেন।
মাইকেল রোজবাস ১৯৪৪ সালে ক্যানসাস সিটিতে জন্ম নেন। ১৯৭০ সালে ক্যামব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি করেন। এর পর তিন বছর তিনি স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এইডেনবোরোতে পোস্ট ডক্টরেট গবেষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালথ্যামে অবস্থিত ব্রান্ডেইস ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত রয়েছেন।
মাইকেল ডব্লিউ ইয়াং ১৯৪৯ সালে মায়ামিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে ১৯৭৫ সালে পিএইচডি করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টরেট গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি নিউ ইয়র্কের রকফেলার ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত।
আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই তিন নোবেলজয়ীর প্রত্যেককে একটি করে সোনার মেডেল, নোবেল ডিপ্লোমা এবং ৯ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে।
Comments