পানির উপরে হলুদ চাষ, ফলন ভালো
মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিল বাঘিয়ার কৃষকরা পানির উপরে ভাসমান পদ্ধতিতে হলুদ চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। অল্প খরচে এবং বিনা সারে বিভিন্ন শাক-সবজিও চাষ করা যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে। এতে কৃষকেরা বাড়তি আয়ের পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারছেন।
মাটিতে হলুদ চাষের চেয়ে পানির উপর কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদের সমন্বয়ে তৈরি স্তূপে ভাসমান হলুদ চাষে অধিক ফলন হয়। এই পদ্ধতিতে চাষ খুবই সহজ ও বাড়তি কোন জায়গারও প্রয়োজন হয় না। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির নিকটবর্তী বিলের জলে, পুকুর বা ডোবায় কচুরিপানা স্তূপ করে তার উপর সহজেই হলুদ চাষ করা যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসে বিলে যখন পানি আসে তখন কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ পানির উপর স্তূপ করে কিছুদিন রাখার পর তাতে পচন ধরলে তার উপর গজানো হলুদের বীজ রোপণ করা হয়। কচুরিপানা ও জলজ উদ্ভিদ পচে উৎকৃষ্ট জৈব সারে পরিণত হয় বিধায় এ চাষে বাড়তি অন্য কোন সার প্রয়োগ করতে হয় না। হলুদে তেমন কোন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় না। এজন্য কীটনাশকও প্রয়োগের দরকার হয় না।
তেতুলবাড়ি গ্রামের প্রণব চৌধুরী নামক এক হলুদ চাষি জানান, ২০ হাত লম্বা ও ৫ হাত চওড়া একটি ধাপ তৈরি করতে ৫ থেকে ৬শ' টাকা খরচ হয় আর তা থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার হলুদ পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, ভাসমান ধাপে হলুদ ছাড়াও পানি কচু, উচ্ছে, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ধুন্দল, পালং শাক, ধনে শাক, লাল শাক, কলমি শাক, ডাটা, লাউ, কুমড়া, খিরাই, শসা সহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি ও মসলা উৎপাদন করা যায়। ভাসমান পদ্ধতিতে ধানের ও বিভিন্ন সবজির আগাম বীজতলা করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের গবেষক বিধান চন্দ্র ঠিকাদার বলেন, বন্যা প্রবণ ও জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে হলুদসহ অন্যান্য শাকসবজি চাষাবাদ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে একটি উপযুক্ত অভিযোজন কৌশল। তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের ভাসমান পদ্ধতিতে হলুদ চাষ কৌশল দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুকরণীয় হতে পারে। রাজৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, এ পদ্ধতিতে শুধু হলুদ চাষই নয়, অল্প খরচে এবং বিনা সারে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করে বাড়তি আয়সহ সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারছে।
ইত্তেফাক/জামান
Comments