নতুন আসা রোহিঙ্গা ১০ লাখ ছাড়াতে পারে/ কূটনৈতিক প্রতিবেদক / কালের কণ্ঠ

নতুন আসা রোহিঙ্গা ১০ লাখ ছাড়াতে পারে

► চীন, রাশিয়াসহ সবার সমর্থনেই নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি 
► পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী

গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে যে হারে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ঢুকছে তাতে করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বাংলাদেশে তিন দিনের যৌথ মিশন শেষে গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইওএম পরিচালক আবিদিকার মাহমুদ এ কথা জানান। এ সময় ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার জর্জ ওকোথ ওবুও তাঁর পাশে ছিলেন।

আবিদিকার মাহমুদ বলেন, এরই মধ্যে চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। প্রতিদিনই আট থেকে ১০ হাজার আসছে। এভাবে চলতে থাকলে বছর শেষে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এর আগে গতকাল দুপুরে ঢাকায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জর্জ ওকোথ ওবুও সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর নিরাপত্তার জন্য চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক সমস্যা আছে। আর অনুপ্রবেশকারীর ঢল শুরু হওয়ায়  দেশটি জটিল সময় পার করছে।
জর্জ ওকোথ ওবুও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এই ঢল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিষয়ে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রমকে অন্যান্য দাতা সংস্থাও সমর্থন করবে। ’
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় অতিরিক্ত মাত্রায় সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে গত বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। আর এটি সর্বসম্মত বিবৃতি। অর্থাৎ চীন, রাশিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের সব স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য এতে সমর্থন দিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ওই বিবৃতি বাংলাদেশ কিভাবে মূল্যায়ন করে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিস্থিতিতে একটা অবস্থান তুলে ধরুক। সেদিক থেকে এই বিবৃতি আমরা সময়োপযোগী ও জোরালো বলে মনে করি। ’
রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল। মিয়ানমার তা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে ওই দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে তিনি জানান, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরের একজন মন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিউ ইয়র্কে তাঁর (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ যেহেতু বিষয়টি সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়, তাই তিনি সু চির দপ্তরের ওই মন্ত্রীর সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দেখা করবেন।
অন্যদিকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময় জাতিসংঘে আলোচনা হলেও এ ইস্যুতে গত ৯ বছরে নিরাপত্তা পরিষদের এটিই প্রথম বিবৃতি। তিনি বলেন, সামনে আরো অনেক দূর যেতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরিবর্তে উন্মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে যে উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে এটি তার সাফল্যের স্বীকৃতি।
এবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে মিয়ানমার বলেছিল, সেখানে তাদের বন্ধু চীন ও রাশিয়া আছে। তাই কোনো প্রস্তাবই গৃহীত হবে না। এর পরও ওই দেশগুলোর সমর্থন নিয়েই যে বিবৃতি এসেছে, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, শব্দ ও ভাষার মারপ্যাঁচে মিয়ানমারের জন্য বিব্রতকর হতে পারে—এমন কিছু প্রসঙ্গ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেমন ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধন’ চালানোর অভিযোগ তুললেও নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে ‘সহিংসতা’ বলা হয়েছে। চীনের আপত্তিতে রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান’ বিষয়টি উল্লেখ না করে কৌশলে ‘শরণার্থী সমস্যার সমাধান করার আহ্বান’ বলা হয়েছে। এর পরও তা বেশ অর্থবহ। এটি প্রমাণ করে, রাখাইন পরিস্থিতি মিয়ানমারের বন্ধুদেরও উদ্বিগ্ন করেছে।
ওই কূটনীতিক বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের কথা জেনেই মিয়ানমার দ্রুত আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানো দেশগুলো এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের ওই ঘোষণাকে স্বাগতও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ‘নীরব কূটনীতি’ চালিয়েছে।
গত বুধবার রাতে জরুরি বৈঠক শেষে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ইথিওপিয়ার তেকেদা আলেমু এক বিবৃতিতে বলেন, পরিষদের সদস্যরা গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সন্ত্রাসী হামলা আমলে নিয়েছেন এবং যে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত তিন লাখ ৭০ হাজার লোকের বাস্তুচ্যুতি হয়েছে তার নিন্দা জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ অনতিবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, উত্তেজনা প্রশমন, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও শরণার্থী সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহায়তা দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং জাতিসংঘ ও অন্য সংস্থাগুলোর তত্পরতাকেও নিরাপত্তা পরিষদ স্বাগত জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, মিয়ানমার ত্রাণকর্মীদের রাখাইনে ঢুকতে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বিবৃতিতে মিয়ানমারকে সেই অঙ্গীকার রক্ষা ও ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করাকেও উৎসাহিত করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে পরিষদ রাখাইন রাজ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের গুরুত্বকে স্বীকার করেছে।


Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা