রোহিঙ্গাদের এইচআইভি, হেপাটাইটিস পরীক্ষার পরিকল্পনা /অনলাইন ডেস্ক


বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশেপাশের এলাকায় পানিবাহিত সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে শরণার্থী কিছু শিশুর মধ্যে হাম ধরা পড়েছে এবং অন্তত দুজন শরণার্থী এইচআইভি আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে সরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে ব্যাপকহারে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। খবর বিবিসির।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কয়েকটি সংক্রামক রোগ নির্ণয়ের জন্য শরণার্থীদের মধ্যে বড় আকারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাইছেন। মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় টিকা না থাকাটাকে প্রথম থেকেই বড় উদ্বেগ হিসেবে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ড: আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, সংক্রামক রোগের মধ্যে তারা এখন পর্যন্ত ৬ জন হামের রোগী পেয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দুজন এইচআইভি পজেটিভ রোগী পেয়েছেন। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যে হাম এবং পোলিওর টিকা প্রদান এবং ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাতে হামের মতো সংক্রামক রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখন বড় শঙ্কা রয়েছে ঐ এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার। স্যানিটেশন যদি আমরা ইমপ্রুভ করতে না পারি, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে ডায়রিয়া, কলেরা বা জন্ডিসের মতো আউটব্রেক হতে পারে।
তিনি আরও বলছেন, বাংলাদেশের মতো বার্মাতেও পোলিও রোগ সেভাবে নেই। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়াচ্ছেন। তবে অপুষ্টি এবং নিউমোনিয়ার প্রকোপের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সহজেই যেকোনো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা, মেদসাঁ স্যঁ ফ্রঁতিয়ে জরুরী সমন্বয়ক রবার্ট ওনাস বলছিলেন, শরণার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত বসবাসের ব্যবস্থা না থাকায় সেখানকার পুরো জনগোষ্ঠির মধ্যেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ব্যাপকহারের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, যেমন নিউমোনিয়া আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়া এবং খাবার ও পানির সঙ্কটে থাকা এসব মানুষেরা ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং যার ফলে খুব দ্রুতই তাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক রোগী পেয়েছি যারা মৃত্যুর প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। এর একটি কারণ হচ্ছে অনেকে এমন সব জায়গায় আছেন যেখানে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা কঠিন। সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা যারা কাজ করছে তাদের পক্ষেও সব জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
রাখাইন মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র একটি রাজ্য এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যাপক অপ্রতুলতা রয়েছে। গত বছরও প্রায় ৮০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী আসলেও এবার এত অল্প সময়ের মধ্যে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এসে পড়ায় ঠিক কী ধরণের স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে তা নির্ণয় করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিভিল সার্জন ড. সালাম বলছেন, ডায়রিয়া, জন্ডিস এবং হামের বাইরে প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে তারা দুজন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী পেয়েছেন। কিন্তু ঠিক কী মাত্রায় এ রোগগুলো আছে সেটি বের করতে আমরা শরণার্থীদের মধ্যে বড় আকারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাচ্ছি। এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস বি-এর স্ক্রিনিংটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আমরা অনুমান করতে পারবো যে কত শতাংশের মধ্যে এই রোগটা আছে। তখন আমরা সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারবো।

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা