বৈমানিকের হাতেই উড়ছে জাতীয় দলের নিশান


ভাবুন তো, সাকিব আল হাসান তাঁর স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের হাত ধরে ঢাকার কোনো রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করছেন। রেস্তোরাঁর পরিবেশটা মুহূর্তেই বদলে যাবে। কারমা শেডরিফ শেরিংয়ের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটা হয় না। তবে ভুটান জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ও তাঁর হবু স্ত্রী দিয়েন দর্জিকেও ঘিরে ধরে উৎসুক জনতা। কেউ কেউ এগিয়ে এসে হাই-হ্যালো বলে হাতটা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক বলে কথা!
কারমার নেতৃত্বেই বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ভুটান। তবে এখানেই সীমাবদ্ধ নয় ভুটান অধিনায়কের পরিচয়। তিনি ভুটান জাতীয় এয়ারলাইনস ড্রুক এয়ারের পাইলটও। আকাশপথে যে বিমানের গা জড়িয়ে থাকে ভুটানের পতাকা। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ও জাতীয় এয়ারলাইনসের পাইলট হিসেবে কারমা হয়ে উঠছেন ভুটানিজদের নেতা। যাঁর নেতৃত্ব সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে ভুটানের ফুটবল ও ড্রুক এয়ার।
কারমা শেরিংয়ের জীবনটা স্বপ্নের মতোই সুন্দর। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, হয় তিনি বৈমানিক হবেন, নাহয় জাতীয় দলের ফুটবলার। বিধাতার কী ইচ্ছে, কারমার দুটি স্বপ্নই পূরণ করে দিয়েছেন তিনি। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সে গল্প শুনলে ঘোর লেগে যায়, ‘ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম বিমান চালাব। আবার কখনো স্বপ্ন দেখতাম বড় ফুটবলার হব। আমি ভাগ্যবান, দুটি স্বপ্নই পূরণ হয়েছে।’
বাগদত্তার সঙ্গে ভুটানের জাতীয় দলের অধিনায়ক। ছবি: প্রথম আলোকারমার পাইলট হওয়াটা ছিল প্রায় অবধারিত। বাবা ভুটানের ইতিহাসের প্রথম বৈমানিক। বাবাকে দেখেই বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নের বীজটা বুনেছিলেন। আর ফুটবলার হওয়ার বাসনা জেগেছিল নিজের আবেগ ও ভালোবাসা থেকে। ভুটানে গ্রেড টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পাড়ি জমান কারমা। সেখানে টুয়েলভ গ্রেড শেষ করে বৈমানিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফেরার কয়েক বছর পরে যোগদান করেন ড্রুক এয়ারে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনাকালীন ফুটবলও ভালোই চর্চা করেছেন। খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ান বয়সভিত্তিক প্রিমিয়ার লিগেও।
পড়তে পড়তে নিশ্চিত প্রশ্ন জেগেছে, বৈমানিক না জাতীয় দলের ফুটবলার—কোন স্বপ্নটা আগে পূরণ হয়েছে কারমার? উত্তর, জাতীয় দলে খেলা। ২০০৭ সালে ১৮ বছর বয়সে ওপেন ট্রায়ালের মাধ্যমে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। আর ২০১১ সালে জয়েন করেন ড্রুক এয়ারে।
সদা হাস্য ‘অলরাউন্ডার’। ছবি: প্রথম আলোএ সবই বলে দিচ্ছে ব্যস্ত জীবন ভুটান অধিনায়কের। সপ্তাহে গড়ে ৩-৪ বার আকাশপথে উড়তে হয়। আবার জাতীয় ও ক্লাব দল মিলিয়ে খেলাও চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। দুই মেরুর দুই পেশাদারি দায়িত্ব থেকেও নেই কোনো ছন্দপতন। কীভাবে সম্ভব? প্রশ্নটা করতেই মুখ থেকে বার্গার নামিয়ে নিয়ে হবু স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘এই প্রশ্নটা আমাকে সবাই-ই করে। আর আমিও প্রস্তুত থাকি উত্তর দিতে।’
কী সেই উত্তর?
‘আমি যখন ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে যাই, তখন এক রাত থাকতে হয়। সে সময় আমি সেখানে জিমে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করি। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করি। আবার যখন ঢাকা বা নেপাল যাই, সেদিনই ফিরে আসতে হয়। তখন রাত দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে মাঠে গিয়ে অনুশীলন করি।’
২০১৬ সালে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া কারমা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন ভুটান দলের মেরুদণ্ড। মাঝমাঠ থেকে খেলাটা তৈরি করে দেন তিনিই। ক্লাব দলে খেলেন থিম্পু সিটিতে। জাতীয় দল ও ক্লাব দল মিলিয়ে খেলতে হয় অনেক ম্যাচ। এই ক্ষেত্রে অনেকটা অঙ্ক কষে চলেন তিনি, ‘জাতীয় দলের খেলায় সময় ৭-৮ দিনের ছুটি নিই অফিস থেকে। আবার ক্লাবের বড় ম্যাচ থাকলে ৩-৪ দিনের ছুটি নিই। কিন্তু লিগে সাধারণ কোনো ম্যাচ থাকলে আর ছুটি নিই না।’ এ সূত্র মেনেই চলছে তাঁর জীবন।

গল্পের শুরুটা সাকিব আল হাসানকে দিয়ে। শেষটাও হোক তাঁকে নিয়ে। বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডারকে কতটা চিনেন বাস্তব জীবনের এই অলরাউন্ডার? প্রশ্নটা করতেই, ‘হ্যাঁ,×হ্যাঁ, অলরাউন্ডার। ভারতে আইএসএল (আইপিএল) খেলে তাই না!’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের নাম বলতে গিয়েও ফুটবল লিগের নাম মাথায় চলে এল কারমার। ফুটবলার বলে কথা!

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা