রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলে তোপের মুখে টিভি উপস্থাপক আনিসা (ভিডিওসহ) /কালের কণ্ঠ অনলাইন



রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলে তোপের মুখে টিভি উপস্থাপক আনিসা (ভিডিওসহ)
                        ছবি ফেসবুক
মার্কিন সাংবাদিক ও উপস্থাপক আনিসা নাউয়াই। তিনি সম্প্রতি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন।
তার এ ভিডিওটি অনলাইনে বেশ সাড়া ফেলেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান ‘ইন দ্য নাও’ পরিচালক ও উপস্থাপক আনিতা পড়াশোনা করেছেন মস্কো আর্ট থিয়েটারে।   তার সে অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
অনলাইনে প্রতিক্রিয়া
এ ভিডিওর জন্য মিয়ানমার সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাকে এজন্য অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। কোথাও কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই তাদের এ গালাগালি। কোথাও আবার রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলেছে।
মিয়ানমার সংশ্লিষ্ট বহু নারী-পুরুষ অকথ্য ভাষায় তার নিন্দা করছে। অনেকেই আবার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তুলে ধরে তাদের মেরে ফেলার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে।
তবে কয়েকজন অবশ্য তার এ ভিডিওটির মাধ্যমে নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোয় ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।
ফেসবুকে তার সেই পোস্টটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন- আনিসা নাউয়াই

কী বলেছেন তিনি ভিডিওতে
মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই দেরিতে জানতে পারি। এ দেশটিকে গলাকেটে হত্যা, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া, শিশু হত্যা  ও নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে হাজারে হাজারে। কিন্তু কিছু বার্মার কর্মকর্তা এ ঘটনাকে বলছেন ভুয়া সংবাদ। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের বাড়িঘর নিজেরাই জ্বালিয়ে দিয়েছে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। দুই শতাধিক গ্রাম জ্বালিয়ে মাটিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১০ সহস্রাধিক বাড়ি। সবই কি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য? দুঃখিত। তথ্যপ্রমাণ বলছে অন্য বিষয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তা ফিল রবার্টসন বলেন, ‘এটা যেন দগ্ধ মাটি। সেনাবাহিনী আগুনে পুড়িয়েছে এবং গুলি করেছে। তারা আরেকবার জাতিগতভাবেভাবে নিমূর্ল করার কাজ করছে। এখন তারা রাখাইনদের বিরুদ্ধে এ কাজ করছে। ’
চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু। শরণার্থীরা বলছেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর মাইন পুঁতছে। পালানোর সময় সেনারা তাদের দিকে গুলি করছে।
জাতিসংঘ এ ঘটনাকে জাতিগতভাবে নির্মূলের একটি পাঠ্যবই উদাহরণ বলছে। কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন নেত্রী একজন মানবাধিকার বিষয়ক নেত্রীও বটে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেন, ‘এটা খুবই কম জানা যায় যে, রাখাইন রাজ্যের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানরা সরে যায়নি। মুসলমানদের ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর অক্ষত আছে। ’
সম্পূর্ণ পৃথিবী অং সান সু চির সঙ্গে ছিল। এমনকি তাকে একটি নোবেল শান্তি পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য অহিংস সংগ্রাম করায় তাকে তা দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম তার প্রতি সর্বতোভাবে আশা করে ছিল। এক সময়কার রাজবন্দী জনগণের বিবেক একজন মানবাধিকারের উদাহরণ হয়ে উঠবেন। তাকে তুলে ধরা হয়েছিল একজন অহিংস উপায়ে দাবি আদায়কারী যোদ্ধা হিসেবে। তাকে গণতন্ত্রের মানসকন্যাও বলা হয়। তার প্রতি সবারই অনেক আশা ছিল।
২০১০ সালে তিনি যখন জেল থেকে মুক্তি পান তখন সারা বিশ্ব তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তিনি অন্য সবার মতো নন।
মিয়ানমার সরকারের ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি যে অত্যাচার, তা থামানোর জন্য কেউ চেষ্টা করেনি। সারা পৃথিবী আশা করছিল এ রক্তগঙ্গা থামবে, কিন্তু বাস্তবে কেউ সেজন্য চেষ্টা করেনি। বড় দেশগুলোও চেষ্টা করেনি। তার বদলে তারা কী করল? তারা মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করল।
চীন, রাশিয়া, ইসরায়েল, ভারত, ইউক্রেন- গত ৩০ বছর ধরে এরাই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অবশ্য দেশটিতে অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা আছে ১৯৯০ সাল থেকে। কিন্তু তারা এর বাইরে কিছু করেনি। এমনকি ইসরায়েল দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বজায় রেখেছে। সমস্যা তৈরি হওয়ার পরেও এ কাজ তারা বজায় রেখেছে।
মিয়ানমারের বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা বলছেন, এখানে বাংলাদেশের মানুষের কোনো জায়গা নেই। তারা অবৈধভাবে এ দেশটি দখল করে আছে। এটা অনেকটা ঐতিহাসিক অধিকারকে বর্তমান ঘটনাবলি দিয়ে ঢেকে ফেলার মতো। জাতিগতভাবে একটি সংখ্যালঘু জাতিকে মুছে ফেলার লক্ষ্য নয় কি এটি?
রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ইতিহাস মোটেই এমন সরল নয়।   তারা মিয়ানমারকে তাদের বাড়ি বলছে বহু প্রজন্ম ধরে।
রিফুজি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান এরিক পল স্কোয়ার্জ বলেন, ‘আমি এখানে যে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছি, তা আগে কোথাও দেখিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধ, জাতিগত নির্মূল অভিযান, যেজন্য দায়ী বার্মার সরকার। এমন ঘটনা আমি আগে দেখিনি। গতকাল আমি একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে এক, পাঁচ ও ১০ বছর বয়সের আগুনে পোড়া শিশুদের দেখেছি। গুলিতে আহত মানুষ দেখেছি, যে দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করার কথা। ’
আমি বলছি না, সাম্প্রতিক রক্তপাত একেবারে বিনা উস্কানিতেই ঘটেছে। এটা শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার পর। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার আছে। কিন্তু সাধারণ জনসাধারণ নয়।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সবারই এ ধরনের অজুহাত থাকে। এখন তা একটি জনগোষ্ঠীকে মুছে ফেলার মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কত মানুষকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে এটা থামার আগে? এখন বাস্তবেই দেখা যাচ্ছে, বাকি বিশ্ব এজন্য তেমন কিছুই করছে না। কারণ এটি মিয়ানমার। অনেক দূরের দেশ। বড় কোনো কৌশলগত অবস্থানেও নেই। বড় কোনো খেলোয়াড় নয়। এটি সিরিয়া নয়, বলকানও নয়। কোরিয়ান উপদ্বীপও নয়- এটা মিয়ানমার। একটু চিন্তা করুন।
ভিডিওটি দেখুন নিচে ক্লিক করে-

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা