মিয়ানমারের চাল একটি মেইলের অপেক্ষায় /আশরাফুল হক রাজীব

মিয়ানমারের চাল একটি মেইলের অপেক্ষায়
একটি মেইল এলেই মিয়ানমারের চাল আসাটা নিশ্চিত হবে। সেই মেইল না আসা পর্যন্ত চাল আসবে কি না তা কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ গতকাল সোমবার মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা গতকাল সকালে কোনো বৈঠকেও বসেননি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, হোটেল ত্যাগ করার আগে তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি অনুরোধ করেন ৪৪২ ডলার দরেই যেন ১ লাখ টন চাল বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা মন্ত্রীর অনুরোধে সায় দিয়ে বলেছেন, চাল দেবেন। কিন্তু যাওয়ার আগে কোনো চুক্তি করেননি। মিয়ানমার পৌছে তারা মেইল করার কথা বলে গেছেন। এই মেইলের প্রতীক্ষায় সময় পার করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা গত রবিবার দিনভর বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
সেখানে দর নিয়ে কথাবার্তা হয়। বৈঠকে দুপক্ষের দরাদরিতে ব্যবধান ছিল ১০ ডলার। বাংলাদেশ প্রতি টন চালের দাম দিতে চেয়েছিল ৪৪০ ডলার। কিন্তু মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ৪৫০ ডলারের নিচে নামেনি। ওই অবস্থায়ই দিনের বৈঠক শেষ হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে আবার কথা হয় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সম্মানে দেওয়া ডিনারে। সেখানে দরের বিষয়ে বাংলাদেশ একটু এগিয়েছে আর মিয়ানমারও একটু নিচে নেমেছে। বাংলাদেশ ২ ডলার বাড়িয়ে ৪৪২ ডলারের প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা ৪৪৫ ডলার দাবি করেন। এভাবেই রাতের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হয়। গতকাল সকালে আবার বৈঠকে বসার প্রত্যাশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা আর বৈঠক করেননি। তারা হোটেল ছাড়ার আগে বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রীকে চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।
বিদেশ থেকে চাল আনতে দর, পরিমানসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে খাদ্য সচিবের নেতৃত্বে। সেই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য রয়েছেন। ওই কমিটির এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বৈঠকের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, শুরু থেকে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছিল তিন লাখ টন চালের। কিন্তু মিয়ানমার এত চাল দিতে অপারগতা জানায়। শুরুতে তারা কিছু সিদ্ধ চাল দেওয়ার কথাও বলেছিল। পরে সেখান থেকে সরে আসে। আর আতপ চালের চুক্তিটি হয়নি মাত্র ৩ ডলারের জন্য।
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক ছিল। এরপরই এক লাখ টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ’
কত দিনের মধ্যে এই চাল আসবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কেবল সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পেলে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন লাগবে। এরপর এলসি খোলা হবে। তারপর চাল আসবে। ’
ওএমএসের ট্রাক কমে গেছে : এদিকে ওএমএস তথা খোলা বাজারে চাল বিক্রির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে প্রথম দিনের তুলনায় কম ট্রাক নেমেছিল। প্রথম দিন ১০৯টি ট্রাক ওএমএসের চাল বিক্রি করলেও দ্বিতীয় দিনে বিক্রি করেছে ৯৪টি ট্রাক। এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকা রেশনিং এর প্রধান নিয়ন্ত্রক তপন কুমার দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিন যারা চাল তুলেছিলেন তারা সবাই চাল বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য দ্বিতীয় দিনে তারা চাল উত্তলন করেননি। আবার অনেকে আতপ চাল হওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ’ তবে ধীরে ধীরে সব ডিলারই চাল তুলবেন বলে জানান তিনি।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে গত আড়াই মাসে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি হলেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এর পেছনে মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করে আসছে সরকার। সরকারি হিসেবেই, মোটা চালের দাম গত এক মাসে বেড়েছে ১৮ শতাংশ, এক বছরে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই।
আইজিপির হুশিয়ারি : যারা চালের কারসাজি করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে চালের আরতগুলোতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। যারা অধৈভাবে মজুদ করছেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। ’ 

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা