নানা সংকটে মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় খোলা আকাশের নিচে চলে পাঠদান
মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
ভবন, শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্রসহ নানা সংকটের কারণে রাষ্ট্রপতির হাতে পুরস্কারপ্রাপ্ত উপজেলা সদরের নারী শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান চলে খোলা আকাশের নিচে। বর্তমান দক্ষ পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকমণ্ডলীর অক্লান্ত শ্রমের ফলে বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক হলেও নানা সমস্যায় বিদ্যালয়টি জর্জরিত। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক খুঁশী মোহন সরকার বিপুল সংখ্যক ছাত্রীদের নিয়ে প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করছেন। তার মত অনেক শিক্ষকই গাছের নিচে ছাত্রীদের পাঠদান করাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে এমন অবস্থা চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় বিদ্যালয়টির কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলে শিক্ষক, ছাত্রী, অভিভাবক, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নারী জাগরণ ও নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন বাইমজহাটি এলাকায় মনোরম পরিবেশে মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসির সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক এমপি মো. ফজলুর রহমান খান ফারুক। বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা এক হাজার ৭০০ জন। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৩৩ জন। বিপুল সংখ্যক ছাত্রীর জন্য রয়েছে কয়েকটি টিনসেট ভবন যা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা এবং এসএসসি ভোকেশনাল শাখায় ড্রেস মেকিং, ফুড প্রসেসিং এবং ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রিক্যাল অডিও ভিডিও নিয়ে ছাত্রীরা সুনামের সঙ্গে পাঠদান করে আসছে। বিদ্যালয়ের জেএসসি, এসএসসি ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল খুবই সন্তোষজনক। এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা পাঠদানের পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উপজেলা, জেলা বিভাগীয় পর্যায়ে সুনাম বয়ে এনে চলেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সন্তোষজনক অবদান রাখায় ২০০৪ সালে এই বিদ্যালয় ঢাকা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা আলেয়া বেগম সাবেক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. ইয়াজ উদ্দিনের কাছ থেকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।
এদিকে বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে রয়েছে ভবন, শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্রের প্রকট সংকট। শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান চলে গাছের নিচে ও খোলা আকাশের নিচে। অথচ এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সদস্য রয়েছেন মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাহাদত হোসেন সুমন, পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ভিপি মো. হযরত আলী মিঞা, ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন, মো. মাখন মিয়া, শহিদুর রহমান শহিদ শৃধা ও বিকাশ চন্দ্র গোষ্মামী। এতসব প্রভাবশালী মহল বিদ্যালয়ে থাকলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এই বিদ্যালয়ে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্রীরা ভালো করলেও বর্তমানে বিদ্যালয়টি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবন নির্মাণ, শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকট, শিক্ষকদের কমন রুম, খেলার মাঠ ও ছাত্রীদের টয়লেট সমস্যা। তিনি বহুতল ভবন নির্মাণসহ সকল সমস্যা দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন বলেন, মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা তিনি অবগত আছেন। সমস্যা দূরীকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইত্তেফাক/নূহু
Comments