মিয়ানমার সরকারের মতে রহিঙ্গা কারা ? কেন তাদের উপর চলছে নির্যাতন ? আসুন জেনে নেই…

সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানিদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব।
পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, রাখাইন, আরাকানি, বার্মিজ, বাঙালি, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মিশ্রণে উদ্ভূত এই সংকর জাতি এয়োদশ-চর্তুদশ শতাব্দীতে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহাঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর চরম বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয় ।
এক সময়ে ব্রিটিশদের দখলে আসে এ ভূখন্ড। মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম ইচ্ছে করেই বাদ দেন ব্রিটিশ শাসকরা । যদিও বলেন এটা বড় ধরনের ভুল ছিল তাদের।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে।
রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে। নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হয়। হত্যা-ধর্ষণ হয়ে পয়ে নিয়মিত ঘটনা। সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়। বাধ্যতামূলক
শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। বিয়ে করার অনুমতি নেই। সন্তান হলে নিবন্ধন নেই। জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না। সংখ্যা যাতে না বাড়ে সে জন্য আরোপিত হয় একের পর এক বিধিনিষেধ।
মিয়ানমারের মূল ভূখন্ডের অনেকের কাছেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ‘কালা’নামে পরিচিত। এ পরিচয়ে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃর্না ও অবজ্ঞা।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যেহেতু বার্মা সরকার তাদের পড়াশুনার সুযোগ দেয় না,তাই অনেকেই মোলিক ইসলামী শিক্ষাকেই একমাত্র পড়াশুনার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। অধিকাংশ গ্রামেই মসজিদ এবং মাদ্রাসা (ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) রয়েছ।
বিগত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করছে। রুটিনমাফিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। বর্তমানে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় বসবাস করছে। যদিও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। রোহিঙ্গাদের প্রতি যা করছে মিয়ানমার সরকার, তা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ। এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বিকশিত হতে থাকা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে সেখানে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ করা, বিচারবর্হিভূতভাবে গ্রেফতার করা, মালিকানাস্বত্ব, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে নিমর্মতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করেছে মিয়ানমার সরকার।
রহিঙ্গাদের প্রতি এই নির্মম অত্যাচার নিপিড়ন বছরের পর বছর ধরে চলার পরেও বিশ্ব মানবতার কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। হয়ত ধর্ম হিসেবে তারা মুসলিম এটাই তাদের বড় অপরাধ। খুন ধর্ষন আর নির্যাতন তাদের জন্য বরাদ্ধ।
শত শত বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হওয়া এই মুসলিম জনগোষ্টির ভবিষ্যত কি?
তারা কি এভাবেই নিজ ভূমিতে অধিকার হারিয়ে মরবে নাকি শরনার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করবে?
আমাদের কি কিছু করার আছে?
আমি ঠিক জানিনা। সামাজিক গণমাধ্যমে রহিঙ্গাদের নির্মম অত্যাচার নির্যাতন আর বিভিষিকাময় জীবনের ছবি দেখে খুব খারাপ লাগে। মানুষ হিসেবে আমি যে কতটা অসহয় তা বুঝতে পারি।
বাংলাদেশ সরকার কে অবশ্যই ধন্যবাদ তারা এই পর্যন্ত কয়েক লক্ষ রহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। আমাদের সম্পদ সিমিত। আমাদের ঘনবসতিপূর্ন দেশ। আমরা নিজেরাও গরিব দেশ। তারপরেও আমরা রহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন ধনী রাষ্ট্র গুলির এগিয়ে আসা দরকার।
আশ্রয় হয়ত আপাতত সময়ে দরকার। কিন্তু মায়ানমারের সরকারকে চাপ দিয়ে রহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা দরকার। রহিঙ্গাদের জন্য মায়ানমারের ভূমি নিরাপদ করা হল সবচেয়ে জরুরী।
স্থায়ী ভাবে সম্যসার সমাধান করা না হলে বছরের পর বছর ধরে এমনটা চলতেই থাকবে। হে আল্লাহ তুমি মুসলিম জাতীকে রক্ষা করো। আমিন।
লেখকঃ
এস আই সুমন (সাংবাদিক)
মহাস্থান(বগুড়া)
এস আই সুমন (সাংবাদিক)
মহাস্থান(বগুড়া)
Comments