পানি, আশ্রয় ও শৌচাগারের ভয়াবহ সঙ্কটে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক রোগব্যাধি

পানি, আশ্রয় ও শৌচাগারের ভয়াবহ সঙ্কটে রোহিঙ্গারা
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল ত্রাণ পেলেও তাদের আশ্রয় মিলছে না এখনো। অনেকে এখনো মাথা গোঁজার স্থানের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। এতে রোদ, বৃষ্টিতে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত নতুন আশ্রয় শিবিরের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। আজ শনিবার থেকে জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতায় মাঠে নামতে পারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
শুক্রবার উখিয়ার পালংখালী সড়কের পাশে কথা হয় মংডুর রাথিডং এলাকা থেকে পালিয়ে আসা হোসনে আরার সাথে। তিনি তার চার সন্তান নিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে বেশ কয়েকটি ত্রাণের প্যাকেট দেখা গেল। তিনি বলেন, তারা এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে এসেছেন। একটি পাহাড়ে পলিথিনের ছাউনি বানিয়ে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু পাহাড় থেকে সবাইকে সরে যেতে বলায় তারা বিপাকে পড়েন। বালুখালী এলাকায় কথা হয় হাফেজ রহিমুল্লাহ সঙ্গে। তিনি জানান, অনেক লোক ও সংস্থা ত্রাণ দিচ্ছে। তবে থাকার জায়গা নেই।
ছড়িয়ে পড়ছে রোগজীবাণু
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, পয়ঃনিষ্কাশন, খাবার পানি ও আশ্রয়স্থলের ভয়াবহ সংকটে রোহিঙ্গারা মানবেতর পরিস্থিতির শিকার হয়েছ। তাদের মাঝে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল শুক্রবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। উখিয়ার কুতুপালং টিঅ্যান্ডটি, বালুখালী টিভি রিলে কেন্দ্র, হাতিরঢেরা, থাইংখালী, আঞ্জুমানপাড়া, থাইংখালী হাইস্কুল মাঠসহ ৭টি স্পটে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সচ্ছল রোহিঙ্গারা বনভূমির পাহাড়ে পলিথিনের ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিলেও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করছে। এসব রোহিঙ্গা যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছে। লোকলজ্জার ভয়ে নারীরা ঝোপঝাড়ের মাঝে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছে। সুপেয় পানি ও খাদ্যের অভাবে শিশু ও বয়োবৃদ্ধারা নানা প্রকার পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা না থাকার কারণে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। যে কারণে ২০টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সেবা দিলেও রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আশ্রয়স্থলের অভাবে জনস্বাস্থ্যের আরো অবনতি হচ্ছে বলে তিনি মনে করছেন।
কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মরত চিকিৎসক অজিত বড়ুয়া বলেন, খোলা আকাশের নিচে, অপরিচ্ছন্ন স্থানে বসবাস ও ময়লাযুক্ত পানি পান করার কারণে বিভিন্ন সংক্রামক রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নতুন করে আসা রোহিঙ্গা বসতি এলাকা ঘুরে পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। রোহিঙ্গাদের আকুতি, তাদের খাবার পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক।
কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ১২টি ক্যাম্পে ১২টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব স্থানে ১২শ নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪৫টি নলকূপ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপনের জন্য কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনুউদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, পানি, খাবার ও বাসস্থান নির্মাণের জন্য প্রশাসন কাজ করছে। ইতিমধ্যে যেসব ত্রাণসামগ্রী আসছে তা বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে দু’বেলা রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ইত্তেফাক/এমআর

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য