ইরাকি কুর্দিদের থামানোর চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের /কালের কণ্ঠ ডেস্ক
ইরাকি কুর্দিদের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রশ্নে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর যে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে, তাতে ভোট দিতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করার জন্য চলছে প্রচার। কুর্দিদের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল কুর্দিস্তানের রাজধানী আরবিলে গণভোটের পক্ষে প্রচার কার্যক্রমের এ ছবিটি শুক্রবার তোলা। ছবি : এএফপি
জঙ্গিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে’ ইরাকি কুর্দিদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আয়োজিত গণভোট অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত রাখার জোরালো আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকি কুর্দি আইন প্রণেতারা গত শুক্রবার গণভোট নেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। এরপর গণভোট বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর গণভোটের আয়োজন করেছে ইরাকি কুর্দিরা। গত শুক্রবার কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক পার্লামেন্টের অধিবেশনে গণভোট নেওয়ার পক্ষে রায় দেন কুর্দি আইন প্রণেতারা। ১১১ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে এদিন ৬৮ জন ভোট দেন, যার মধ্যে গণভোটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৬৫ জন। পার্লামেন্টের বাকি সদস্যরা এদিন অধিবেশন বর্জন করেন। অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা তাঁরা আগেই দিয়েছিলেন।
কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র বারবার দৃঢ়তার সঙ্গে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারকে জানিয়েছে যে এই গণভোট আইএসবিরোধী লড়াই এবং আইএসমুক্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। বিতর্কিত এলাকায় গণভোট করাটা বিশেষভাবে উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী। ’
নিপীড়িত কুর্দিরা ১৯৯১ সালে ইরাকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে।
ওয়াশিংটন বারবার স্থানীয় কুর্দিস্তান সরকার ও বাগদাদ সরকারের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত স্পষ্ট সময়সীমা না পাওয়ায় কুর্দিরা অবশেষে তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়াশিংটন তো বটেই, অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তি এবং খোদ বাগদাদ সরকারের হুমকি সত্ত্বেও তারা গণভোট অনুষ্ঠানের প্রশ্নে অনড় রয়েছে।
কুর্দিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানিকে গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরাতে বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে এ সপ্তাহেই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ব্রেট ম্যাকগুর্ক। কুর্দিস্তানের আরবিলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বারজানিকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেসবের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বাগদাদ সরকারের জ্বালানি খাতের রাজস্বের ভাগ কুর্দিস্তান সরকারের প্রাপ্য এবং কুর্দিস্তানের সশস্ত্র যোদ্ধাদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, কুর্দিদের জ্বালানি তেল রপ্তানিকে বৈধতা দেওয়া হবে, কুর্দি রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারি ব্যবস্থায় জায়গা দেওয়া হবে এবং আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব কুর্দিরা গ্রহণ করবে না বলে মনে করছেন ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির ইরাকবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল নাইটস। তাঁর মতে, বারজানিকে গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরানোর এসব প্রস্তাব সম্ভবত যথেষ্ট নয়।
এদিকে কুর্দি গণভোট ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান কী হবে, সেটা নির্ধারণে আগামী শুক্রবার তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এরই মধ্যে বলেছেন, গণভোট অনুষ্ঠানের কারণে ‘খুব, খুব খারাপ কিছু’ হতে পারে। উল্লেখ্য, ইরাকি কুর্দিরা জ্বালানি তেল রপ্তানির জন্য তুরস্কের ভেতর দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র : এএফপি।
Comments