রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার নামে বাংলাদেশকে ললিপপ খাওয়াচ্ছে ভারত : জেনারেল ইবরাহিম/রাজনীতি

জেনারেল ইবরাহিম
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের দমন পীড়নকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত। সেই সাথে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বের করে দিতে উদ্যত ভারত সরকার। অপর দিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠাচ্ছে দেশটি। ভারতের এমন দ্বৈত আচরণকে বাংলাদেশের মানুষকে ললিপপ খাওয়ানোর সাথে তুলনা করেছেন মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। টিভিএনএ’কে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ভারত বলছে তারা আমাদের পাশে আছে। আমি বলবো ভারত আমাদের পাশে নেই। ভারত বাংলাদেশ সরকারের সাথে কৌশলগত রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নাই। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা কোন অবস্থায় স্থায়ী নয়। স্থায়ী হচ্ছে একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীর স্বার্থ। আমাদের তথাকথিত পরীক্ষিত বন্ধুদের নিয়ে এরই মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। সেই জন্য আমাদেরকে নতুন বন্ধুর সন্ধান করতে হবে। যারা আমাদের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াবে। তারাই প্রকৃত বন্ধু। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের শান্তি চাই। এই ইস্যুতে কোন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি যাতে কেউ টেনে না আনে আমাদের সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং সকল সম্প্রদায়কে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর হামলা কোন নতুন বিষয় নয়। কিন্তু এবারের হামলা আগের চেয়ে অনেক ভয়ংকর। রোহিঙ্গারা ইতোপূর্বেও বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ফেরত পাঠিয়েছে। এবার বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পর্যায়ের পররাষ্ট্র গোয়েন্দারা ব্যর্থ হয়েছে। গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণেই সরকার রোহিঙ্গাদের প্রথমে ঠেকাতে চেয়েছে। পরে দেশের মানুষের আগ্রহের কারণে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
এসময় তিনি বলেন, ত্রাণ সংগ্রহ করার চেয়ে তা সঠিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেখানে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যার কারণে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি মারাত্মক পর্যায়ে আছে। চার থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আসে মাত্র ১৫-২০ দিনের মধ্যে। তাদের জন্য খাবার পানি, স্যুয়ারেজ, তাবুর ব্যবস্থা করা হয়নি। তাছাড়া সরকার ব্যক্তি উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করছে। এই ধরণের সমস্যা কোনভাবেই একক ভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা সমাধানে সরকারকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করতে হবে। এই জন্য সরকারকে এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের এই মুহুর্তে একটি স্বার্থের সংঘাত যাচ্ছে। মিয়ানমার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার সীমান্তে সৈন্য বাহিনী মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য উপযুক্ত। তবে এই মুহুর্তে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে মানবিক সংকট এতো প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেখানে এখন যুদ্ধের কোন পরিবেশ নেই। সেখানে যদি কোন প্রকার সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি হলে সবার আগে বলী হবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ সর্ব অবস্থায় শান্তি প্রিয় দেশ। তাই বাংলাদেশ চেষ্টা করবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে যে কোনো সংকট নিরসন করতে।
আমাদের সময়
Comments