চীনকে রুখতে মরিয়া মোদির সাহায্য সু চিকে
ড্রাগনের ‘নেকনজর’ থেকে মিয়ানমারকে মুক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। দেশটি সফরে গিয়ে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন পর্বের সূচনা করেন। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরো বাড়ানো নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। স্বাক্ষর করেছেন সমুদ্রপথে নিরাপত্তা বাড়ানোসহ মোট ১১টি চুক্তিপত্রে। মিয়ানমারের নাগরিকদের ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা ফি তুলে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মোদি। একটি আবেগঘন মুহূর্তে সু চির হাতে মোদি তুলে দেন ৩১ বছর আগে শিমলার ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ’-এ তাঁর জমা দেওয়া গবেষণাপত্রের বিশেষ প্রতিলিপি। মোদির কথায়, “মিয়ানমারের উন্নয়নে আমরাও অবদান রাখতে চাই। ভারত সরকারের ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ উদ্যোগে শামিল করতে চাই তাদের। ”
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের আগ্রাসী ভূমিকার পাল্টা হিসেবে মিয়ানমারকে যতটা সম্ভব কাছে পেতে চাইছে ভারত। কৌশলগত অবস্থানের প্রশ্নে দেশটির গুরুত্ব নয়াদিল্লির কাছে ক্রমেই বাড়ছে।
আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের ভৌগোলিক যোগসূত্র একমাত্র যে দেশের মাধ্যমে, সেটি হলো মিয়ানমার। মোদির সাধের প্রকল্প ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ আরো বহুগুণ বাড়ানো ছাড়া গতি নেই। বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তা—তিনটি ক্ষেত্রেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে সু চির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন মোদি। ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দি মিয়ানমারের ৪০ জন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরজা মিয়ানমারের দিকেই খোলে। ভারত এখানে যোগসূত্র তৈরি করতে উত্সুক। ’
তবে এ কাজে চীনের প্রাচীর যে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সে কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নয়াদিল্লি। মিয়ানমারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে পুঁজি সরবরাহ, কম সুদে ঋণ, প্রযুক্তিগত সাহায্য কয়েক বছর ধরে মুড়ি-মুড়কির মতো বিলিয়ে গেছে পেইচিং। বিনিময়ে চীনের যে বাণিজ্যিক লাভ হয়নি, এমনটা নয়। মিয়ানমারের বিপুল হাইড্রো-কার্বন রসদ হাতের মুঠোয় পাওয়া, অবাধ বাণিজ্যপথ, তেল-গ্যাস করিডর ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোতে যথেচ্ছ সুবিধা পাচ্ছে চীন। ভারত ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে এই ক্ষেত্রগুলোতে। পাশাপাশি মিয়ানমারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের আধিপত্য বিস্তারের কাজটিও করে চলেছে চীন।
এক বছর ধরে আশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় স্তরে প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে মরিয়া ভারত। কিন্তু মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কমিয়ে সে দেশের সঙ্গে আরো গভীর সম্পর্ক তৈরি না করলে সাফল্য আসবে না, তা স্পষ্ট। সেই লক্ষ্যপূরণে মোদির সফর একটি বড় পদক্ষেপ মনে করছে দিল্লি। সূত্র : আনন্দবাজার।
Comments