একাত্তরে ইন্দিরা, সতেরোতে হাসিনা, পরাস্ত সু চি / পীর হাবিবুর রহমান
একাত্তরের বীরযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে দেখতে গিয়েছিলাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। একগাদা সংবাদপত্র নিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ’৭৫-এর
প্রতিরোধ যোদ্ধা মগ্ন ছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সংবাদ পড়তে।
তার ’৭১ ও ৭৫-এর বীরত্বের কারণেই আমার হৃদয়নিঃসৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে এই অসীম
তার ’৭১ ও ৭৫-এর বীরত্বের কারণেই আমার হৃদয়নিঃসৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে এই অসীম
সাহসী মুজিব সন্তানের প্রতি। বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন
আদর্শের সন্তান হিসেবে এই বীরের প্রতি আমার দুর্বলতার শেষ নেই। তার সব ভুলত্রুটি ভেসে
যায় ’৭১ ও ৭৫-এর বীরত্বের কাছে। এ জাতির জীবনে শ্রেষ্ঠ সন্তান তারাই মাতৃভূমির স্বাধীনতার
জন্য জীবন বাজি রেখে যারা সম্মুখসমরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের কাছে তারাই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ যারা পিতৃহত্যার
পর নেমে আসা অন্ধকার যুগে আত্মবলিদান করেছেন, জেল খেটেছেন, ঘাতকের নির্যাতন
সহ্য করেছেন এবং অসীম সাহস নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে জাতীয়
মুক্তি বাহিনীর ব্যানারে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তারাই আদর্শিক যারা সেদিন বঙ্গবন্ধুর
আদর্শে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ হেঁটেছেন, দল কখনো ক্ষমতায় আসবে তারা ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের
মালিক হবেন— এ রকম আশা ছেড়ে রাজনীতিকে কল্যাণের পথ হিসেবে বেছে নিয়ে।
যাক, নানান আলোচনার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলছিলেন, একাত্তর
এসেছিল বলে ভারতের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বনন্দিত নেত্রী হয়েছিলেন,
তেমনি রোহিঙ্গা ইস্যু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। বঙ্গবীর কাদের
সিদ্দিকী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কঠিন বিষয় নিয়ে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেননি। কিন্তু জীবনের
পাঠ নিয়েছেন যুদ্ধ, বিদ্রোহ, উত্থান-পতনে ঘেরা রাজনীতির পথে পথে। সন্তানের হৃদয় নিয়ে
গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আজন্ম মুগ্ধ হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি। তার রক্ত, আবেগ,
অনুভূতিজুড়ে বহমান শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী লীগ তাকে ধারণ করতে পারুক আর না পারুক, তিনি থাকতে পারেন আর না-ই
আওয়ামী লীগ তাকে ধারণ করতে পারুক আর না পারুক, তিনি থাকতে পারেন আর না-ই
পারেন; ইতিহাস স্বীকৃত সত্য হচ্ছে, তিনি জাতির মহাদুর্দিনে বাঙালির মহত্তম নেতা বঙ্গবন্ধুর
আদর্শের কর্মী। মুখে যাই বলুন, হৃদয়ের রক্তক্ষরণের ভিতর দিয়ে তিনি মুজিবকন্যা শেখ
হাসিনা ও শেখ রেহানার ভাই। তার মূল্যায়ন হৃদয়ের তন্ত্রীতে ধারণ করতে করতে উপলব্ধি
করার চেষ্টা করেছি, আসলে কী হচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর আদরের দুলাল, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের
নায়ক তোফায়েল আহমেদের মুখোমুখি হয়েছিলাম সেদিন। কথায় কথায় জানিয়েছিলেন,
সংসদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা
ঐতিহাসিক ও সাহসী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
সোমবার সকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের
সোমবার সকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের
বাসভবনে এক আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী
এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও
এসএ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সবার হৃদয়
নিঃসৃত আবেগ অনুভূতি ছিল মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অত্যাচার, নির্যাতনের মুখে
পতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
আশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন; তার প্রতি ছিল আকুণ্ঠ সমর্থন ও প্রশংসা।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার একজন প্রিয় মানুষ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের
সেখান থেকে বেরিয়ে আমার একজন প্রিয় মানুষ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের
বাসভবনে আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম। রাজনীতিবিদদের মধ্যে জেপির আনোয়ার হোসেন
মঞ্জু ও মোরশেদ খানকে আমার অন্য উচ্চতার মানুষ বলে মনে হয়। তুমুল আড্ডাবাজ,
দিলখোলা, অভিজাত এই মানুষেরা দলমতের ঊর্ধ্বে নির্মোহ সত্য উচ্চারণে দ্বিধা করেন না।
রসিকতায় তাদের জুড়ি মেলা ভার। হৃদ্যতায় তাদের কোনো কার্পণ্য নেই। সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানকে আগাগোড়াই দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্যক্তিগতভাবে যেমন
শ্রদ্ধাশীল, তেমনি সুমহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর মমত্বে আটকাপড়া একজন মানবিক
মানুষ। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান কথায় কথায় বলছিলেন, বার্মার সামরিক
জান্তা যেভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, ভিটেমাটি
ছাড়া করেছে; সেটি যুদ্ধাপরাধের শামিল।
অব দ্য রেকর্ডের আলোচনায় তিনি বলছিলেন, এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভূমিকা
অব দ্য রেকর্ডের আলোচনায় তিনি বলছিলেন, এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভূমিকা
নিয়েছেন তা সাহসী এবং সমর্থনযোগ্য। এরকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উচিত সব সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিবদের নিয়ে একটি সংলাপের আয়োজন
করা। যেখানে দলমতের ঊর্ধ্বে চিন্তার জগৎ খোলা থাকবে। এ ইস্যুতে বন্ধুপ্রতিম দেশ
ভারত ও চীনকে পাশে নিয়েই মিয়ানমারের শাসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।
সেই আড্ডা শেষ হতে না হতেই রাতের টেলিভিশন পর্দায় দেখলাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও
সেই আড্ডা শেষ হতে না হতেই রাতের টেলিভিশন পর্দায় দেখলাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণির সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর মহান
সংসদে আলোচনা শুরু হয়েছে। টেলিভিশনের পর্দায় আমি কেবল প্রবীণ রাজনীতিবিদ
আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধের
মতো শুনেছি। তাদের বক্তব্য ছিল রাষ্ট্রনায়োকোচিত। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার
অমানবিক, নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড যতটা না ফুটে উঠেছে; তার চেয়ে বেশি তাদের
মানবিক হৃদয় উন্মোচিত হয়েছে মহান সংসদে। আমির হোসেন আমু অনেক তথ্য ও
উপাত্ত নিয়ে কথা বলেছেন। তোফায়েল আহমেদ তার অনন্য সাধারণ, প্রতিভাদীপ্ত
বক্তব্য রেখেছেন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও রোহিঙ্গা ইস্যুতে অভিন্ন
সুরেই কথা বলেছেন। সবার বক্তব্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
তবে বিশ্বনন্দিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
তবে বিশ্বনন্দিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান একটি সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গরির রাষ্ট্রের নায়ক হিসেবে বিশ্বের
নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতি যে সমর্থন দিয়েছিলেন তার প্রতিধ্বনি যেন উচ্চারিত
হয়েছে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন,
একাত্তরে আমাদের ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল;
তেমনি মিয়ানমারের শাসকেরা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি সেখানকার
সেনাসদস্য ও সীমান্তরক্ষীদের ওপর একটি চক্রের হামলা তুলে ধরতে যেমন ভুলেননি;
তেমনি সামরিক জান্তার বর্বরোচিত আক্রমণের কথা দ্বিধাহীন চিত্তে, সাহসিকতার সঙ্গে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি, তাদেরই এ সমস্যার
সমাধান করতে হবে। অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের নিজ বাসভূমিতে
ফেরত নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাওয়াতে
পারি; তার সঙ্গে ৫-৭ লাখ লোককে খাওয়াতে পারব। তিনি আরও বলেছেন, জাতিসংঘের
অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিশ্ববিবেকের কাছে এ ইস্যুটি তিনি তুলে ধরবেন।
বার্মার সামরিক জান্তা একুশ শতকের বিশ্বরাজনীতিতে একটি রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ ছাড়া
বার্মার সামরিক জান্তা একুশ শতকের বিশ্বরাজনীতিতে একটি রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ ছাড়া
আর কিছু নয়। গণতন্ত্রহীন বার্মার সামরিক শাসকরা মিয়ানমারকে যেভাবে শাসন করে
আসছে যুগের পর যুগ; মানব সভ্যতার ইতিহাসে গণতন্ত্রকামী বিশ্বরাজনীতির বুকে তা
কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। মিয়ানমারের গণতন্ত্রের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি এরা নির্দয়
আচরণ করেছে। অগণতান্ত্রিক শাসনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তার অনুসারীদের
কারারুদ্ধ করেছে, হত্যা করেছে। সু চিকে কখনো অবরুদ্ধ, কখনো কারাদহনে তার
কণ্ঠ স্তব্ধ করেছে। অক্সফোর্ডের যে তরুণ বাইসাইকেল চালানো সু চির প্রেমে পড়েছিল,
পরিণত বয়সে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেত্রীর প্রতি অবিচার দেখে আমাদের
মতো তারাও ক্রন্দন করেছে। এই সামরিক শাসকরা শাসন ব্যবস্থাই দখল করেনি, ব্যবসা-
বাণিজ্য সব কিছুতে নিয়ন্ত্রণ আরোপই করেনি; গণতন্ত্রের সূর্যোদয় হরণই করেনি, সু চির
গণরায় ছিনতাই করেছে। শান্তিকন্যা সু চি নোবেল বিজয়ী হয়েছেন, ফের গণরায়ে অভিষিক্ত
হয়েছেন; কিন্তু পরিণত বয়সে এসে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের ক্ষমতার পুতুল
হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। মিয়ানমারের ক্ষমতার আত্মা যেখানে স্বৈরশাসক, সামরিক
জান্তা; নোবেল বিজয়ী সু চি সেখানে তাদের ক্ষমতার দাসী মাত্র।
সারা জীবনের সংগ্রাম ও অর্জনকে ইতিহাসের খেরোখাতায়, রোহিঙ্গাদের রক্তের বন্যায়
সারা জীবনের সংগ্রাম ও অর্জনকে ইতিহাসের খেরোখাতায়, রোহিঙ্গাদের রক্তের বন্যায়
ভাসিয়েই দেননি; নিজেকে সামরিক জান্তার অন্যায়, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ভিটেমাটি
ছাড়া করা অভিযানের সহযাত্রী করেছেন। এই সু চিকে আমরা চিনি না। আজকের অশান্ত
পৃথিবীতে একাত্তরে যেমন বীর বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে, সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রসর
শরণার্থীদের আশ্রয়, খাবার, অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়ে ভারতের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী, ইতিহাসের
কিংবদন্তি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার তেজদীপ্ত নেতৃত্বের মহিমায় শান্তি ও সাহসের আঁচলে
আশ্রয় দিয়েছিলেন, তেমনি বিশ্বনন্দিত, বাঙালির অহংকার মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা অসীম
সাহসিকতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, খাবার দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার
উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেমন রাখা হবে,
খাবার দেওয়া হবে; তেমনি তাদের পরিচয়পত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নেওয়া
হবে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ এদের নির্দিষ্ট সীমানার ভিতরে,
শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হলে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করুন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানপত্নী এসেছিলেন, কান্নাকাটি করেছেন শরণার্থীদের কাছে গিয়ে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানপত্নী এসেছিলেন, কান্নাকাটি করেছেন শরণার্থীদের কাছে গিয়ে।
দেশে দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে, কারণ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক
জান্তা গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণে মত্ত হয়েছে, ভিটেমাটি ছাড়া করছে। রোহিঙ্গাদের আজ
কোনো আবাসভূমি নেই। মিয়ানমার শাসকরা তাদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব হরণ
করেছে। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের ফিরিয়ে নিতে
বলেছেন। এই অভিমত শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নয়, গোটা দেশের মানুষের নয়;
বিশ্বের বিবেকবান মানুষেরও। এ নিয়ে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির সময় আর্তনাদ করেছিলেন। তার প্রতি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির সময় আর্তনাদ করেছিলেন। তার প্রতি
আমার কোনো বিশ্বাস, আস্থা নেই। একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর
উত্তরাধিকারদের প্রতি আমার কোনো কৌতূহল নেই। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। পাকিস্তান
সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) কী খেলা খেলছে, জাতিসংঘ কতটা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে
বসে আছে, মানবাধিকারের স্লোগানমুখর পশ্চিমা দুনিয়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তার
বর্বরোচিত আক্রমণের মুখে কতটা শান্ত, স্থির হয়ে আছে তা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই।
শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব কূটনীতিককে নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের
নিয়ে শরণার্থী শিবির সফর করবেন।
বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করেছেন। সেই
বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করেছেন। সেই
স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিয়েছেন। সমাজতান্ত্রিক চীনের হৃদয় কাঁপেনি। মিয়ানমার তার
বাণিজ্যের ঊর্বর ভূমি। কিন্তু রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঊর্বর বাংলাদেশের জনগণের হৃদয় মানবিকতা,
মানবতার সেই হৃদয়কে লালন করেছেন মহান শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। একাত্তরে
আমাদের জন্য বর্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠন করেছিলেন
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, আমাদের বিশ্বাস কোনো রাজনীতির বিভক্তির পথে না হাঁটলে
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত মিয়ানমার জান্তার আক্রমণের
বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে, গণহত্যার বিরুদ্ধে, অমানবিকতার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত
গড়ে তুলতে পারবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেখানে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবেন না, সেখানে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেখানে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবেন না, সেখানে
পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, চলে এলে তাদের জন্য দরজা বন্ধ করবেন না।
এই লড়াই রাজনীতির হিসাব-নিকাশের নয়; এটি মানবতার লড়াই। দানবের বিরুদ্ধে মানব
শক্তির লড়াই। বিশ্ব সভ্যতার, জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের বাইরে স্থলমাইন পুঁতে রাখা মিয়ানমার
শাসকদের নির্লজ্জ বেহায়াপনার বিরুদ্ধে, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে প্রতিবাদের লড়াই। বিশ্ব
জনমত গঠন করে নেহেরুকন্যা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে
পরাস্ত করেছিলেন, তেমনি মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ঔদ্ধত্য ও
দম্ভের পতন ঘটাবেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সসম্মানে
নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
সত্য ও মানবিকতার জয় অনিবার্য, সংগ্রামের পথ যতই কণ্টকাকীর্ণ হোক না কেন? সবাইকে
একটা কথা মনে রাখতে হবে, ধর্মান্ধরা ইসরাইলের ইহুদি হোক, ভারতের হিন্দু হোক,
বাংলার মুসলমান হোক, মিয়ানমারের বৌদ্ধ হোক; তারা সবাই মানবতার শত্রু।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
Comments