লাশগুলো হিন্দুর, প্রমাণ দিক মিয়ানমার’ /পরিবর্তন ডেস্ক ৪:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
গণকবরের লাশগুলো যে হিন্দু সম্প্রদায়ের, মিয়ানমার সরকারের কাছে তার প্রমাণ চেয়েছে ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল। সংগঠনটির প্রধান লা ইয়াও সোমবার এই প্রমাণ দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্টের ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেন। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদুলুকে এক ই-মেইল বার্তায় এসব কথা বলেছেন ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লা ইয়াও।
গত দু’দিনে (রোববার ও সোমবার) মিয়ানমার সরকার দাবি করে, তারা সংঘাতপূর্ণ রাখাইনের মংডু শহরের ইয়ে বাউ ইয়া গ্রামে তিনটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন, যেখান থেকে নারী-শিশুসহ ৪৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের ফেসবুকে এই গণকবরের ছবি দিয়ে দাবি করেছে, লাশগুলো রাখাইনের হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং তাদের হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা।
বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন দ্য আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র দিকে আঙুল তুলেছে মিয়ানমার সরকার।
মিয়ানমার সরকারের এই দাবি ইতোমধ্যে আরসা নাকচ করে দিয়েছে। আরসা’র এক মুখপাত্র সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে হত্যায় মিয়ানমারের দাবি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’
এবার মিয়ানমার সরকারের দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লা ইয়াও।
তিনি জানান, যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে, সেখানে এভাবে সরলীকরণ ঠিক হবে না। এটা এখনও অস্পষ্ট, হত্যাকাণ্ড মিয়ানমারের বাহিনী না জঙ্গিরা করেছে।
লা ইয়াও বলেন, ‘স্বাধীন তদন্ত ছাড়া আমরা বলতে পারি না, আরসা এসব হিন্দু গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে এলাকায় এই গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হিন্দু-মুসলিম সৌহাদ্যপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাস করে আসছে। আরসা এসব হিন্দু গ্রামবাসীকে হত্যা করবে এমন কোনো কারণ আমাদের চোখে পড়ে না।’
ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের এই প্রধান এও বলেন, হয়তো মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এদের মুসলিম ভেবে ভুল করে হত্যা করেছে। কারণ এখানে মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে সম্প্রীতি ছিল। সুতরাং তাদের মধ্যে সংঘাত বাধিয়ে বিশ্বব্যাপী হিন্দুদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা থেকে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যায় বিশ্বব্যাপী যে জনমত গড়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান সুদৃড় করার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দোষারোপের পথ বেছে নিয়েছে।
লা ইয়াও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থেই রাখাইনে হিন্দু ও রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দিয়ে স্বাধীন তদন্ত করা প্রয়োজন।
তিনি জাতিসংঘের তদন্তদলের নেতৃত্বে সমস্ত গণহত্যার তদন্ত করারও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হবার পর সোমবার পর্যন্ত জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের সঙ্গে বসবাস করা ৩০ হাজার হিন্দুও বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তারা এখানে এসে নিজেদের স্বজনদের হত্যার নির্মম বর্ণনাও দিয়েছেন।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে ৫ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। যদিও মিয়ানমার সরকারের দাবি, নিহতের এই সংখ্যা ৪শ’।
আইএম
Comments