অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসায়ী হিসেবে অভিবাসন

কাউসার খান, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) থেকে
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীতপ্রাচীন রূপকথায় সওদাগরদের বাণিজ্য করতে সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার হাজারো গল্প রয়েছে। বাস্তবেও তার ব্যতিক্রম নেই। মানবসভ্যতা গড়েই উঠেছে হাজার হাজার বছর আগে ভিনদেশে বাণিজ্য করতে যাওয়া সেই সওদাগরদের পিছু নিয়ে। সে দিক থেকে ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপ-মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া এখন অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বর্গরাজ্য। অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের মতোই এখন বাংলাদেশিদের জন্যও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। নেওয়া যাচ্ছে বিজনেস মাইগ্রেশনের সুযোগও।
ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী ও বিনিয়োগ ভিসায় আবেদন করে অস্ট্রেলিয়ায় আগমন, বাণিজ্য ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়িক দক্ষতা সংক্রান্ত এই অভিবাসন নীতিমালাটি মূলত ‘অস্ট্রেলিয়ান মাইগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৮’ ও ‘মাইগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৯৪’-এর আলোকে তৈরি করা। বর্তমানে সেই নীতিমালার আওতায় ১৮৮ উপ-শ্রেণির চারটি প্রধান ভিসায় আবেদনের সুযোগ রয়েছে। আবশ্যিক শর্ত পূরণ করতে পারলে এই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে।
মেলবোর্ন শহরের একটি দৃশ্যএগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী (বিজনেস ইনোভেশন) ভিসার শর্তপূরণ কিছুটা সহজসাধ্য।
প্রাথমিকভাবে এ ভিসার মেয়াদকাল চার বছরের জন্য হলেও পরবর্তীতে ভিসা শ্রেণি ৮৮৮-এর অধীনে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যাবে। আবশ্যিক শর্ত হিসেবে ৮ (আট) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বাৎসরিক ব্যবসায়িক হিসাব দেখাতে হবে। ৫ (পাঁচ) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের টার্নওভার থাকতে হবে যা আবেদন করার সর্বশেষ চার বছরের মধ্যে অন্তত দুই বছরের মধ্যে হতে হবে। আবেদনের যোগ্যতার পয়েন্ট হচ্ছে ৬৫। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।
অস্ট্রেলিয়ার একটি দৃশ্যঅধিকাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের ন্যূনতম শর্ত পূরণের জন্য এ ভিসা একটু সহজসাধ্য। যেসব ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে চার বছরের ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা এ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভিসা পেলে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা স্থাপন বা চলমান ব্যবসা স্থানান্তর এবং অস্ট্রেলিয়ায় মান অনুযায়ী সফল ব্যবসা স্থাপন ও পরিচালনা করার যোগ্যতা রাখেন, এটা প্রমাণ করতে পারলে পরবর্তী ধাপে আবেদন করা যাবে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসের।
আবেদন করার নিয়ম
বিজনেস মাইগ্রেশন ভিসায় অভিবাসন বিভাগের মনোনয়ন ও আবেদন করার আমন্ত্রণ পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাঁর আগ্রহ বা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (EOI) ব্যক্ত করতে হবে। আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক উভয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মনোনয়নের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় নাকি আঞ্চলিকভাবে বসবাস ও ব্যবসা করতে আগ্রহী সে বিষয়টির উল্লেখসহ আবেদন করতে হবে। তবে আপনি কোথায় সুযোগ পাবেন তা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। আবেদন করার জন্য আবেদনকারী যোগ্য মনে হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
আবেদনপত্র গৃহীত হলে আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এই ভিসাটি হবে প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্য এবং পরবর্তীকালে আবার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা যাবে।
এ ভিসাতে অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করা যাবে এবং পরিবারের সদস্যরাও কাজ ও পূর্ণকালীন পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। তবে ভিসার প্রাথমিক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে তিনি একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন এবং আঞ্চলিক বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যায়টি সন্তোষজনক হলে তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ও পরিবারের সদস্যরাও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে যাদের পক্ষে নিজ দেশ ত্যাগ করা সব সময় সম্ভব হয় না, তাদের জন্য এটি একটি সুবিধা। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারা যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার একটি দৃশ্যএ ছাড়া এ ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারা যায় বিজনেস ট্যালেন্ট প্রোগ্রামে (সাব-ক্লাস ১৩২)
এ ভিসায় আবেদন করলে স্থায়ী বসবাস করা যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। আবশ্যিক শর্ত হিসেবে, ৪ (চার) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ব্যবসায়িক সম্পত্তি থাকতে হবে এবং ব্যবসায় ৩ (তিন) মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের টার্নওভার থাকতে হবে বা ১ (এক) মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড থাকতে হবে।
বিজনেস ইনোভেশন প্রোগ্রাম (সাব-ক্লাস ৮৮৮)
এ ভিসার আওতায় স্থায়ীভাবে আসা যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। আবশ্যিক শর্ত হিসেবে ২ (দুই) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ব্যবসায়িক সম্পত্তি বা ৬ (ছয়) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দেখাতে হবে এবং ব্যবসায় ৩ (তিন) লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের টার্নওভার থাকতে হবে যা আবেদন করার ১২ মাস আগের হিসাব হতে হবে।
এ বিষয়ৈ আরও বিস্তারিত জানা যাবে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের অভিবাসন ওয়েবসাইটের এই লিংকে।
*কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী। ইমেইল:

আরও সংবাদ

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা