বৈষম্যের শিকার আদিবাসী নারীরা

  আঞ্জুমান আরা
 ১২ আগস্ট ২০১৭, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে ৫৪টির বেশি জাতিগোষ্ঠীর ৩০ লাখ আদিবাসীর বসবাস রয়েছে। যাদের অর্ধেক নারী। আদিবাসী নারীরা যুগ যুগ ধরে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে।
আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গত ৬ আগস্ট ‘টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ও বাংলাদেশের আদিবাসী নারীর অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীদের নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, বাঙালি নারীদের চেয়ে আদিবাসী নারীরা জাতিগতভাবে অধিক নিপীড়নের শিকার। আদিবাসী নারীরা সীমাবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আদিবাসী নারীরা সমাজে অবহেলিত ও জাতিগতভাবে শোষণ ও নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশে গণমুখী শাসনব্যবস্থা কায়েম না হলে আদিবাসী ও বাঙালি কোনো নারীই নিরাপদ নয়।
সন্তু লারমার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা বলেন, এটা খুবই সত্য যে, আদিবাসী নারীরা নানা ধরনের নির্যাতন এবং নিপীড়নের শিকার। পাহাড়ি জীবনটা আগে আমাদের জন্য ছিল খুব সহজ, সরল এবং নিরাপদ। কিন্তু এখন তা নেই। এখন আমরাই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। বিভিন্ন জেলা থেকে বাঙালি যারা পাহাড়ে এসে বসবাস করছে তাদের দ্বারা এবং আমাদের পাহাড়িদের দ্বারাও এখন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারী এবং শিশুরা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আদিবাসী নারীরা এখন একা চলাফেরা করতে পারছে না। পাহাড়ে চাষের জন্য গেলে কন্যাদের তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া আদিবাসীদের নিয়ে বাঙালিদের নানা ধরনের অসম্মানজনক মন্তব্য, ইভটিজিং আর বৈষম্য তো আছেই। এটা একদমই উচিত নয়। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আদিবাসী অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের আদিবাসী আইন মেনে চলতে সরকারকে পদক্ষপ নিতে হবে।
‘আদিবাসী নারীরা সমতলের মানুষ দ্বারাই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। আদিবাসী নারীরা জাতিগত, লিঙ্গগত, ভাষাগত, ধর্মীয়গত এবং শ্রেণিগত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশের আদিবাসী নারীরা বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। এ নির্যাতন বন্ধে অচিরেই আমাদের উদ্যোগী হতে হবে’Ñ বলে মনে করেন নারীনেত্রী রোকেয়া কবির।
জাতীয় পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অনেক পরিকল্পনা-কৌশল ও আইন থাকলেও তা আদিবাসী নারীবান্ধব নয়। বিভিন্ন বয়সের আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক (বিআইডব্লিউএন) যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, বিআইডব্লিউএন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে ২৪ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার ১৮টি ঘটনার ১০টি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটেছে। কাপেং ফাউন্ডেশন পরিসংখ্যান অনুযায়ী একই সময়ে ২৮ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ১৮টি ঘটনা ঘটেছে সমতলে বাকি ১০টি পার্বত্য চট্টগ্রামে।
নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১-তে অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীদের জন্য বিশেষ কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে। এ ছাড়া নীতিমালায় আদিবাসী নারীদের জন্য স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসক ও পুলিশের অসহযোগিতা, মামলা চালানোর জন্য অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে আদিবাসী নারীসহ মূল ধারার নারী নির্যাতন কমেনি বরং আরও বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সারা হোসেন বলেন, সামগ্রিকভাবে নারী অধিকারের বিষয়গুলো পেছনে পড়ে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের বিষয়গুলো বাদই থেকে যাচ্ছে। এমনকি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও আদিবাসী নারী সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পাহাড়ি এলাকার নারীরা প্রতিকূল পরিবেশ এবং ভাষাগত কারণে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার বা আইন সহায়তা কেন্দ্রগুলোর সাহায্য নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক নাসিমুন আরা হক মিনু জানান, ‘আদিবাসী নারীর ওপর সহিংসতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো মানবতাবিরোধী সহিংসতায় জড়িত অপরাধীরা অনেক ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আমাদের দেশটি শুধু বাঙালিরাই স্বাধীন করেনি। আদিবাসীরাও তার অংশ ছিল। আদিবাসী নারীদের নানা ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়নমুক্ত করা ও নানারকম বৈষম্যমুক্ত করা আমাদেরই দায়িত্ব।’

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা