প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি (২০১৬-১৭) প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে রপ্তানি আয় বাড়ছে
- Get link
- X
- Other Apps
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, সবজি ও ফল রপ্তানি আয় প্রায় ১২ শতাংশ কমে গেছে। বিপরীতে রুটি, বিস্কুট, কেক, মসলা, ভোজ্যতেল ও চর্বিজাতীয় পণ্য এবং কোমলপানীয় রপ্তানি আয়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জানিয়েছে, বর্তমানে শতাধিক প্রতিষ্ঠান রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের ১৪০টির মতো দেশে। পণ্যের মান উন্নত করা ও গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (গ্যাপ) অনুসরণ করে সবজি, মাছ ও ফল উৎপাদন করে তা প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে এ খাতটিতে রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগ অনেক বেশি।
বাপার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার সদস্যরা রপ্তানি করেছে ২৪ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে রপ্তানি আয় এক দশকে প্রায় ১২ গুণ বেড়েছে। এ হিসাব নগদ সহায়তা নিতে কোম্পানিগুলো যে সনদ নেয়, তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
ইপিবির পণ্যভিত্তিক রপ্তানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।
এ খাতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ জানিয়েছে, বিগত অর্থবছর তাদের রপ্তানি আয় হয়েছে ২৩ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার সমান। আগের বছরের চেয়ে তাদের রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রাণের দাবি, তাদের পণ্য এখন কানাডায় ওয়ালমার্ট, সৌদি আরব ও ওমানে ক্যারিফোর, যুক্তরাজ্যে পাউন্ডল্যান্ড, ভারতে রিলায়েন্স ফ্রেশ ও সিটি মার্ট, কাতারে গ্র্যান্ড মল ও আনসার গ্যালারি, মালয়েশিয়ায় টেসকো, সেগি ফ্রেশ ও ইয়নের মতো সুপারশপ ও চেইন স্টোরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান বলেন, চার-পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশি পণ্য শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিরা কিনত। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রাণের পণ্য মূল বাজারেও প্রবেশ করেছে।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ জানিয়েছে, তারা ৩২টি দেশে মসলা, সরিষার তেল, চানাচুর, আচার, সুগন্ধি চালসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক (আন্তর্জাতিক বিপণন) মো. গুলজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে তুলনামূলক নতুন প্রতিষ্ঠান এসিআই। বিগত বছর তাদের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০ লাখ ডলার, যা বিগত বছরের চেয়ে ১১৬ শতাংশ বেশি। এসিআই কনজ্যুমার প্রডাক্টসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ মান নিশ্চিত করে রপ্তানি করলে এ খাতে বাংলাদেশ খুব ভালো করতে পারবে। এ জন্য শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নয়, নজর দিতে হবে মূল বাজারের দিকে।
বাপার তথ্যমতে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০টি বাজার হলো সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, ওমান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও কুয়েত। অন্যদিকে শীর্ষ ১০টি পণ্য হলো মসলা, ফলের রস, পানীয়, বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি, হিমায়িত হালকা খাবার (স্ন্যাকস), ক্যানডি, সরিষার তেল ও মাংস।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত বছর ‘দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যনিরাপত্তা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ৪০টি প্রক্রিয়াজাত পণ্য খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বিয়ার, কুঁড়ার মতো শস্যজাত পণ্য, বেকারি পণ্য, ফিশ ফিলেসহ মাছজাত পণ্য, আলুজাত পণ্য, জুসসহ ফলজাত পণ্য, হিমায়িত মাংস, প্রক্রিয়াজাত সবজি, পাস্তা, নুডলস, সস, সুগার কনফেকশনারি, চা ইত্যাদি।
উন্নত মান নিশ্চিত করতে পারলে বাজার বড় হবে
এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী
সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)
অনেক কারণে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশ ভালো। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশে কৃষিপণ্যের সরবরাহ অনেক ভালো। পাশাপাশি এ দেশের শ্রমের মূল্য তুলনামূলক কম। এখন খাদ্যপণ্য উৎপাদনে প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, মান নিয়ন্ত্রণ গুরুত্ব পাচ্ছে। মান নিশ্চিত করতে পারলে আমরা ইউরোপ, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বাজার ধরতে পারব। সম্প্রতি জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) প্রথম বাংলাদেশকে সে দেশে খাদ্যপণ্য মেলায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি করতে চায়, এটা এ দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রপ্তানি বাড়াতে হলে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আমাদের কম সুদে ঋণ দরকার। পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দরকার।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments