জিংগো বাইলোবা অ্যাটম বোমাতেও মরেনি যে গাছ

জেনেভায় আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রধান কার্যালয় চত্বরে জিংগো বাইলোবাগাছ l ছবি: লেখকঅ্যাটম বোমা বিস্ফোরণের আরও একটি বছর পূর্ণ হলো ৬ আগস্ট। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ৬ ও ৯ আগস্ট এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সেই বিস্ফোরণে ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বের কারও অজানা নেই। বলতে গেলে সেখানে জীবিত প্রাণীর অস্তিত্ব খুবই কম ছিল। তবে বিস্ফোরণের পর সেখানে একই প্রজাতির ছয়টি গাছ বেঁচে ছিল। গাছটির নাম জিংগো বা জিংকো। পুরো নাম জিংগো বাইলোবা। হিরোশিমায় বেঁচে থাকা সেই ছয়টি গাছের একটির বংশধর হলো ছবির গাছটি। গত ৯ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই গাছের ছবি তোলার সুযোগ হলো। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রধান কার্যালয়ের চত্বরে গাছটি দেখে ও ছুঁয়ে স্বভাবতই এক অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল। অ্যাটম বোমার আঘাতের পরও বেঁচে যাওয়া সেই গাছগুলোর একটির বংশধরকে ২০১৩ সালের ৬ আগস্ট সুদূর জাপান থেকে নিয়ে এসে রোপণ করা হয় জেনেভায়। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের উদ্যোগে ওই বছর হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে তাদের প্রধান কার্যালয় চত্বরে গাছটি রোপণ করা হয়। গাছটি যে গাছের বংশধর, সেই জীবিত গাছটির বয়স এখন ২০০ বছর।

জিংগো বাইলোবার (Gingko Biloba) আরেক নাম মেইডেন হেয়ার। গাছটির বৈজ্ঞানিক নামের বানানে ও উচ্চারণে ভিন্নতা রয়েছে বিভিন্ন দেশের অভিধানে। এ গাছের আদি নিবাস হলো চীনে। এ ছাড়া জাপান ও কোরিয়ায় এ গাছ বিপুলভাবে লাগানো হয়। উদ্ভিদবিজ্ঞানে জিংকোফাইটা বিভাগের গাছ এটি। চীনে এই বিভাগের গাছের ফসিল পাওয়া গেছে ২৭০ মিলিয়ন বছর আগের। উচ্চতায় এ গাছ ১৬০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। শিকড় অনেক নিচে প্রবেশ করে। ঝড়, বাতাস, বরফে ক্ষতি হয় না। পাতার আকৃতি অপূর্ব। 

পাতার রং সারা বছর সবুজ থাকে, বসন্তকালে দু-তিন সপ্তাহ হলুদ রং ধারণ করে। এ গাছের কাঠে কখনোই পোকামাকড় আক্রমণ করে না। ১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো গাছও রয়েছে। জাপানের মানুষ টেম্পল হিসেবে শ্রদ্ধা করে পুরোনো এই গাছগুলোকে। এটা টোকিওর অফিশিয়াল গাছ। গাছের পাতা টোকিওর প্রতীক। বিস্ফোরণের পর হিরোশিমায় বেঁচে যাওয়া ছয়টি গাছকে বিশেষভাবে জাপানি সংকেতে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১০-এর মার্চে পচনশীলতায় একটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কাণ্ড বরাবর গাছটি কেটে আবার লাগানো হয়। এখন সেটি জীবিত আছে, নতুনভাবে পাতা গজিয়েছে। এ গাছের পাতার নির্যাস ব্যবহারের গবেষণা চলছে। ডিমেনশিয়া, আলঝেইমারস রোগের চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহারের গবেষণায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। পনেরো শতকে চীনে প্রথম ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও জার্মানিতে রেজিস্টার্ড ওষুধ হিসেবে ১৯৬৫ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ গাছের বীজের ভেতরের বাদামজাতীয় অংশ চীনে বিয়ে এবং নববর্ষের অনুষ্ঠানে ট্র্যাডিশনাল খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অ্যালার্জিসহ অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এ গাছের। বনসাই হিসেবেও জনপ্রিয়। চীনের বিজ্ঞানীরা ২০১৬তে এ গাছের জেনোম প্রকাশ করেছে। এ গাছের রয়েছে অসাধারণ বিশালাকার জেনোম, ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন নিউক্লিওবেজ। এই মহাবৃক্ষের সামনে নত হয়ে সেদিন অ্যাটম বোমায় আহত-নিহত মানুষদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছিলাম।
আরও সংবাদ

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা