- Get link
- X
- Other Apps
কাঠের মোটা মোটা তক্তা দিয়ে বানানো চেয়ার, টেবিল ও টুল ছড়ানো। ত্রিপল কিংবা বাঁশের কঞ্চির ছাউনি দিয়ে বানানো পাশখোলা (ঘেরাহীন) খুপরি ঘর, যা তৈরি করেছে আঁকাবাঁকা গলিপথ। তাতে রাখা শৈল্পিক আঁচড়ে ঢাকা অকেজো গাড়ি। এদিক-সেদিক ছড়িয়ে নানা ভঙ্গির চিত্রকর্ম। কেবল চিত্রকর্ম প্রদর্শনেই আছে বিশাল এক দেয়াল। আছে কাঠ, গাড়ির চাকা ও টায়ার দিয়ে বানানো বিসদৃশ কারুখচিত অদ্ভুত সব ভাস্কর্য। একপাশে শোভা পাচ্ছে বিশাল একটি নৌকা। শিশুদের খেলার জন্য আছে হাতে তৈরি বিভিন্ন ঢঙের কারুখচিত খেলনা। হেন কোনো কাঠ বা দেয়াল নেই, যেখানে তুলির শৈল্পিক ছোঁয়া লাগেনি। এসবের এক পাশেই নানা সবজি ও ফুলের চাষ।
১ আগস্ট গিয়েছিলাম যুক্তরাজ্যের এই নোমাডিক কমিউনিটি গার্ডেনের ইতিবৃত্ত জানতে। যে তথ্য পাওয়া গেল, তা সত্যিই চমকপ্রদ।
তিন বছর আগের কথা। রেলের উড়ালসড়কের পাশের এই জায়গাটি পরিত্যক্ত পড়ে ছিল। লন্ডন নিউক্যাসল নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি এর মালিক। স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী মিলে জায়গাটিকে নিজেদের মতো করে শিল্প ও বিনোদনের জন্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন। ডেভেলপার কোম্পানি এতে রাজি হয়। সেই থেকে শুরু। বলছিলেন নিজেকে গার্ডেনের একজন স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দেওয়া অ্যান্ড্রু।
অ্যান্ড্রু বলেন, অলিভার ও কেইট নামে এক যাযাবর দম্পতি এখানকার ঘরের কাঠামোগুলো তৈরি করেছেন। ইতালিয়ান নকশাকর অ্যানা লিস বানিয়েছেন ভাস্কর্যগুলো। সেলিম নামে একজন বানিয়েছেন একটি ‘অপেরা হাউস’, যার সামনে নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা আছে। অ্যান্ড্রু বলেন, বিভিন্ন লোক বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে নানা সৃষ্টিশীল কাজ উপহার দিয়ে যাচ্ছে। ‘নোমাডিক’ (যাযাবর) মানেই হলো অস্থায়ী। যে কারণে এই গার্ডেনের কোনো কিছুই স্থায়ী না। নড়বড়ে, চাইলে সরিয়ে ফেলা যায়, বলেন অ্যান্ড্রু।
মনের খোরাকই সবকিছু
মানুষের মনের খোরাক জোগানোই এখানকার সবকিছু। গ্র্যাফিটি আর্টিস্ট জিম ভিশন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন শিল্পীরা এসে নতুন নতুন চিত্রকর্ম এঁকে দিয়ে যান। এখানকার অলিখিত নিয়ম, আগের আঁকা চিত্রের চেয়ে নতুনটা ভালো হতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগে এখানে চিত্রাঙ্কন, শরীরচর্চা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনোদনের ক্লাস হয়। আর প্রতি শনি ও রোববার জমে গান-বাজনার আসর। লোকজন নিজেদের মতো করে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাজির হন।
নোমাডিক গার্ডেনের আরেকটি চমৎকার দিক হলো, এখানে একটি দোকান আছে, নাম ‘পে হোয়াট ইউ ক্যান’। অর্থাৎ, খাবার খাবেন আর বিল যা পারেন তা-ই দেবেন। ‘সেইভ দ্য ডেইট’ নামে আরেকটি দোকান রেস্তোরাঁগুলোর বেঁচে যাওয়া খাবার এনে নগণ্য মূল্যে বিক্রি করে। আর পর্তুগালের ফ্যালকন নামের একজন নিজের বন্ধুকে নিয়ে সাইকেল সারানোর কাজ করেন এখানে। অর্জিত আয় যায় বাগানের ব্যবস্থাপনায়।
আবার খণ্ড খণ্ড জমিতে সবজি ও ফুলের চাষ করেন আশপাশের বাসিন্দারা। শৌখিন এই সবজিচাষিদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
গ্রাফিতি আঁকিয়ে জিম ভিশন বলেন, পরিচালনার জন্য কোনো সংগঠন নেই। অসাংগঠনিকতাই এখানকার সৌন্দর্য। লোকজন নিজেরাই নিজেদের জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ করেন। সবাই অংশীদার। অনুদান দিয়ে মেটে এর আনুষঙ্গিক খরচ। তিনি বলেন, যে জায়গাটি একসময় অপরাধকর্মের আখড়া ছিল, সেটিই এখন হয়ে উঠেছে সৃষ্টিশীল কাজ ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য গড়ার অভয়ারণ্য।
অনেক আলাপের মধ্যে জিমের একটি কথা বেশ কানে বাজছিল। স্প্রে বোতল থেকে দেয়ালে রং ছিটিয়ে নকশা তুলতে তুলতে তিনি বলছিলেন, ‘ইটস আ প্লেস ফর পিপল টু বি পিপল’। অর্থাৎ, মানুষ মানুষের মতো করে সময় কাটানোর জন্য এই স্থান। ঠিক তাই, এখানে নিজেকে সীমাহীন মুক্ত ভাবা যায়।
আরও সংবাদ
বিষয়:
- Get link
- X
- Other Apps
Comments