রায় নিয়ে বাড়াবাড়ির জন্য আ’লীগকে চরম মূল্য দিতে হবে : মোশাররফ
দিনকাল রিপোর্ট : চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলে বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। এটা দেশের জন্য কখনো মঙ্গলজনক হতে পারে না। এটা অশনি সংকেত। আমরা মনে করছি, বিচার বিভাগকে স্বাধীন রেখে দেশকে অগ্রসর করতে হবে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বীর উত্তম শহীদ জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দল। : মোশাররফ বলেন, আমাদের দেশে যে তিনটি প্রধান স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিচারবিভাগ। কেউ কেউ প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চাচ্ছেন। অথচ যদি প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশও ধ্বংস হয়ে যাবে। আজ যারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চান, জনগণই তাদের (সরকার) পদত্যাগ চাইবে। যারা সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন, একদিন জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে। যদি প্রধান বিচারপতিকে একটি দলের চাপে পড়ে পদত্যাগ করতে হয় তাহলে রাষ্টের যে তৃতীয় স্তম্ভ, অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য স্তম্ভ, বিচারবিভাগ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। আর বিচারবিভাগ ধ্বংস হয়ে যাওয়া মানে দেশ ধ্বংস হয়ে যাাওয়া। : প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের কোনো রায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে বলা হয় আদালত অবমাননা। আজকে সরকার আদালত অবমাননা করছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি খায়রুল হক করছেন, মন্ত্রীরা করছেন। রাস্তায় মানুষ নামিয়ে দিয়ে তারা আদালত অবমাননা করছে। খায়রুল হককে দিয়ে সরকার অনেক কথা বলিয়েছে। রায় নিয়ে খায়রুল হক কোনো কথা বলতে পারেন না। তিনি সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আমরা এখনো দেখছি রাস্তায় মানববন্ধন করা হচ্ছে। তাদের দাবি প্রধান বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন তার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হবে। অথচ সকল বিচারপতি একত্রিত হয়ে সংবিধান অনুযায়ী এই রায় দিয়েছেন। : ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা ‘বাড়াবাড়ি’ করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। : তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে এর জন্য খেসারত দিতে হবে। ভুল করলে আল্লাহ মাফ করে। কিন্তু রাজনীতিতে ভুল করলে খেসারত দিতে হয়। অতীতে তা প্রমাণ হয়েছে। কারণ রাজনীতিতে মাফ বলে কিছু নেই। : মোশাররফ হোসেন বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও এ সংশোধনীর ওপর বক্তব্য দিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে মুখোমুখি করে দিয়েছে যা দেশের জন্য মঙ্গল হতে পারে না। : তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে চাপ দেয়ার চেষ্টা গর্হিত অপরাধ। কারণ বিচার বিভাগকে সামনে রেখে দেশ অগ্রসর হয়। তা না হলে জনগণের সর্বশেষ ভরসার স্থল, সেটাও সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। : বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী’ অভিহিত করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা যে বাড়াবাড়ি করেছে, তার প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে হবে এবং তার খেসারত তাদের দিতে হবে। রাজনীতিতে কেউ যদি ভুল করে তার খেসারত দিতে হয়, রাজনীতিতে মাফ বলে কথা নেই। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র আজ আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। এই গণতন্ত্রকে অতীতে বাকশাল সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছিলো। এই গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য এখন তারা ষড়যন্ত্র করছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আগামী নির্বাচনেও একটা নাটক করে ভোট বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আবার তারা ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। তাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, গত নির্বাচনের মত আর কোনও নির্বাচন দেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে। : আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শাহাজাদা সৈয়দ ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়–য়া, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল গফুর, আতাউর রহমান আঙ্গুর, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমিন প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাসুম বিল্লাল, এমএম মশিউর রহমান, আলহাজ মোঃ ওয়াজ উদ্দিন, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ শাহজাহান কবির, নজরুল ইসলাম সরকার, এসএমএ অদুদ মাহমুদী, স্থপতি মোঃ মুকসদুর রহমান রিপন, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ জাবেদ ইকবাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মোঃ হেলাল উদ্দিন, ডাঃ মোঃ আবু হানিফ মিয়া, লায়ন মোঃ শরিফুল ইসলাম মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ উসমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মোঃ মশিউর রহমান বেপারী, বিল্লাল হোসেন হাওলাদার, মোঃ আমিন মন্ডল, মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। : :
Comments