সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারতে তিন তালাক অসাংবিধানিক

নরেন্দ্র মোদিতাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরসহ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ প্রবীণ বিচারপতির কনস্টিটিউশন বেঞ্চের তিনজন এই প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেন। তবে বাকি দুজনের মত ছিল, মুসলমান সমাজের বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ছয় মাসের মধ্যে আইন প্রণয়ন করুক। তত দিন পর্যন্ত তিন তালাক প্রথা প্রয়োগ স্থগিত থাকুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩-২ সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ই গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় এই রায়কে ঐতিহাসিক বর্ণনা করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট মুসলমান নারীদের সমানাধিকারই শুধু দিলেন না, এই রায় নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়ে উঠবে।
বিচারপতিরা ছিলেন পাঁচ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। প্রধান বিচারপতি খেহর শিখ, বিচারপতি কুরিয়ন জোসেফ খ্রিষ্টান, বিচারপতি আর এফ নরিম্যান পার্সি, বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত হিন্দু ও বিচারপতি আবদুল নাজির মুসলমান। এই পাঁচজনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি খেহর ও বিচারপতি নাজির তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে মনে করেননি। তাঁদের মতে, ইসলামে তিন তালাকের উল্লেখ রয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, তালাক-এ-বিদদত সুন্নি সম্প্রদায়ের এক হাজার বছরের এক প্রথা। এই প্রথা সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১ ও ২৫ ধারার পরিপন্থী নয়। প্রধান বিচারপতি খেহর তাঁর রায় পড়ার সময় বলেন, আইন প্রণয়নের সময় সব দল যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু বাকি তিন বিচারপতি এই অভিমতের সঙ্গে সহমত হননি। তাঁদের মতে, এই প্রথা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, ইসলাম ও কোরআনবিরোধীও। এক নিশ্বাসে তিনবার তালাক উচ্চারণ করা অথবা চিঠিতে তিনবার তালাক লিখে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রথা ইসলামে নেই। কোরআনেও এর উল্লেখ নেই। মোট ৩৯৫ পৃষ্ঠার এই রায়ের উপসংহারে লেখা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট ৩-২ সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে তিন তালাক প্রথাকে বাতিল করে দিচ্ছে।
মামলার শুনানির সময় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বলা হয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালত তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিলে কেন্দ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় গৃহীত হওয়ার পর এখন দেখার বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় সরকার কত দ্রুত নতুন আইন পাস করে।
সব আবেদনের শুনানি হয় একই সঙ্গে। আবেদনকারীদের বক্তব্য ছাড়াও শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকার ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কথা শোনেন। ১১ মে থেকে টানা ছয় দিন শুনানি চলে। ১৮ মে রায় স্থগিত রাখেন সর্বোচ্চ আদালত।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক প্রথার সমর্থন করে। তাদের দাবি ছিল, ধর্মীয় প্রথায় আদালতের হাত দেওয়া ঠিক নয়। তাদের সুপারিশ ছিল, যারা টেলিফোনে তিন তালাক উচ্চারণ করে বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছে বা মুঠোফোনে তিনবার তালাক লিখে পাঠাচ্ছে অথবা চিঠি মারফত, তাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো দরকার। তাদের সামাজিকভাবে বয়কটও করা যেতে পারে। কিন্তু তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়া হবে ধর্মবিরোধী। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই রায় বিবেচনা করার জন্য ১০ সেপ্টেম্বর ভোপালে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড অবশ্য রায়কে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তারা ২০০৭ সাল থেকেই এই প্রথা বাতিল করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী নাজমা পারভিন বলেন, এই রায় বৈপ্লবিক ও ঐতিহাসিক। রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসও।

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা